Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

উচ্চশিক্ষায় এআইইউবির গৌরবময় ৩০ বছর

Icon

সাদি ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম

উচ্চশিক্ষায় এআইইউবির গৌরবময় ৩০ বছর

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) চলতি নভেম্বরে প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৩০ বছর পূর্ণ করছে।

এই দীর্ঘ যাত্রায় এআইইউবি থেকে ৩৭ হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তারা প্রযুক্তি, সরকারি-বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা, ক্রীড়াসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ১৯৯২-এর আওতায় ১৯৯৪ সালে ড. আনোয়ারুল আবেদীন রাজধানীর মহাখালীতে এআইইউবি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তা বনানীতে সম্প্রসারিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক অনুমোদন পায় ১৯৯৫ সালের ৬ নভেম্বর। স্থায়ী ক্যাম্পাস সনদ অর্জন করে ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর। রাজধানীর কুড়িল এলাকায় প্রায় নয় একর জমির ওপর এআইইউবির স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত।

বর্তমানে এআইইউবিতে চারটি অনুষদ রয়েছে। এগুলো হলো প্রকৌশল অনুষদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ। এসব অনুষদের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ভাষাশিক্ষা, এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্কিং, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডিজাইনিং, অ্যানিমেশন, প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিরিউটি, এইচআরএম, ইমার্জিং টেকনোলজির ওপর এআইইউবি সংক্ষিপ্ত কোর্স করায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন দেশি-বিদেশি শিক্ষক আছেন প্রায় ছয়শ।

এআইইউবিতে এখন পর্যন্ত ২১টি সমাবর্তন হয়েছে। সমাবর্তনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড, ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও ড. আনোয়ারুল আবেদীন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আছে একাধিক অ্যাকাডেমিক পুরস্কারের ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ইতালি, স্পেন, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৮৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এআইইউবির অ্যাকাডেমিক অংশীদারত্ব রয়েছে। প্রায় প্রতি সেমিস্টারেই এআইইউবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমে অংশ নেন।

এআইইউবির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারগুলোর মধ্যে রয়েছে সিস্কো নেটওয়ার্কিং একাডেমি, ওরাকল একাডেমি, মাইক্রোসফট ইমাজিন একাডেমি, অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিস অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস, এশিয়া-প্যাসিফিক কোয়ালিটি নেটওয়ার্ক, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিস, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কিউএস স্টার রেটিং অর্জন করেছে এআইইউবি। রেটিংয়ে এআইইউবি পায় সম্মানজনক ৪-স্টার মর্যাদা। এই অর্জন এআইইউবির গুণগত শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকার ও বৈশ্বিক মানদণ্ড পূরণের প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২৪ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত এপিকিউএন একাডেমিক কনফারেন্সে (এএসসি) এশিয়া প্যাসিফিক কোয়ালিটি নেটওয়ার্কের বেস্ট মডেল ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স (কিউএ) অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে এপিকিউএন কোয়ালিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অর্জন করে।

এআইইউবি বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিং, কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং, টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং ও স্কিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাঙ্কিংয়ে বিভিন্ন বছরে স্থান পেয়েছে।

উচ্চশিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এআইইউবি আইএসও ৯০০১:২০০৮ সার্টিফিকেশনসহ অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এআইইউবি আন্তর্জাতিক মানের দুটি জার্নাল ‘এআইইউবি জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ও ‘এআইইউবি জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকাশ করে আসছে। এআইইউবি জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এজেএসই) বাংলাদেশের প্রকৌশল ক্ষেত্রে একমাত্র স্কোপাস-ইনডেক্সড জার্নাল।

সম্প্রতি এআইইউবির তিনজন শিক্ষক স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও এলসিভিয়ারের মর্যাদাপূর্ণ শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এআইইউবির শিক্ষকেরা বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছেন, যা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তহবিল দ্বারা পরিচালিত।

শিক্ষার্থীসহ গবেষকদের গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে এআইইউবি বিভিন্ন গবেষণা প্রণোদনা প্রদান করে। গবেষণার জন্য রয়েছে ড. আনোয়ারুল আবেদীন ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশন, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনার্জি রিসার্চ, সেন্টার ফর ন্যানোটেকনোলজি রিসার্চ, সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল রিসার্চ, সেন্টার ফর রোবোটিক্স অ্যান্ড অটোমেশন, বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার।

বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটিং অ্যাডভান্সমেন্ট, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, রোবোটিকস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড সিগনাল প্রসেসিং টেকনিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে এআইইউবি নিয়মিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-সেমিনার আয়োজন করে আসছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গবেষকেরা অংশগ্রহণ করেন।

এআইইউবি ১০ বছরের একাডেমিক স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ২০২৩-২০৩৩ প্রকাশ করেছে। একাডেমিক স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানে একাডেমিক নেতৃত্ব, টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিকীকরণ, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং ডিজিটালাইজেশন এই পাঁচটি মূল কৌশলগত দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এআইইউবির পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসে মাল্টিমিডিয়াসহ আধুনিক শ্রেণিকক্ষ আছে। আছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক গ্রন্থাগার। এখানে একত্রে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়তে পারেন। গ্রন্থাগারে ৮০টির বেশি একাডেমিক ক্ষেত্রের প্রায় ৪৫ হাজার বই আছে। এখানে আছে ৭০ হাজার অনলাইন জার্নাল, ১ লাখ ৮০ হাজার ই-বুকসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ।

ক্যাম্পাসে মুট কোর্ট, মিডিয়া স্টুডিও, মাল্টিপারপাস হল, অডিটোরিয়াম, ডে কেয়ার সেন্টার, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক প্রার্থনার স্থান, বিশ্বমানের মেডিকেল সেন্টার, শিক্ষক লাউঞ্জ, শিক্ষার্থী লাউঞ্জ, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি), ভার্চুয়াল ল্যাব, প্রকৌশল ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, ফিজিক্স ল্যাব, কেমিস্ট্রি ল্যাব, থ্রিডি অ্যানিমেশন ল্যাব, আইপি ল্যাব, ডিজাইন স্টুডিও, ক্যাফেটেরিয়া ও ফুড কোর্ট, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা সেবা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা প্রভৃতি রয়েছে।

এ ছাড়াও এআইইউবির পুরো ক্যাম্পাসে বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা ওয়াই-ফাই সার্ভিস, ফুটবল-ক্রিকেট মাঠ, বাস্কেট বল কোর্ট, টেনিস কোর্ট, ভলিবল কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্টসহ একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স, একটি অত্যাধুনিক জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুল, ইনডোর গেমসের স্থান আছে। ক্যাম্পাসে রয়েছে সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসে আছে সবুজ বাগান, সোলার সিস্টেম ও যানবাহনের জন্য পার্কিং সুবিধা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৪০টির বেশি ক্লাব ও খেলাধুলার টিম রয়েছে, যেখানে প্রতি সেমিস্টারে নতুন শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত হন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে চলছেন শিক্ষার্থীরা।

এআইইউবির বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন খেলাধুলায় সুনাম কুড়িয়েছেন। তারা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল, জাতীয় পুরুষ ও নারী ফুটবল দল, শুটিং দলের সদস্য হিসেবে পারফর্ম করছেন।

এআইইউবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন গুগলের প্রথম বাংলাদেশি প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (পরিচালক) জাহিদ সবুর, এআইইউবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

একবিংশ শতাব্দীর বাজার চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিভিত্তিক সর্বোচ্চ গুণগত মানের উচ্চশিক্ষার প্রসারে এআইইউবি অঙ্গীকারবদ্ধ। এআইইউবি ৩০ বছর ধরে আগামীর নেতৃত্ব গড়তে নিরলসভাবে কাজ করছে। এখানকার ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা সুনামের সঙ্গে দেশ-বিদেশে নিজেদের সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখছেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এআইইউবি লক্ষ্য।

এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যবৃন্দ, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ডিন, ডিরেক্টর, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ৩০ বছর পার করে আরও সামনের দিকে সুনামের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।

তিন দশকে এআইইউবি শুধু শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দেয়নি। বরং শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি গুণগত, মানবিক শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা যাতে এই বিশ্বকে আলোকিত করতে পারেন, সেই চেষ্টাই করে এসেছে এআইইউবি। এই চেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম