Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

বাংলাদেশের এনসিডি মোকাবেলায় তামাক নীতির অগ্রগতি ও কম ক্ষতিকারক বিকল্প

Icon

ডা. মো. ফজলে কিবরিয়া চৌধুরী

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম

বাংলাদেশের এনসিডি মোকাবেলায় তামাক নীতির অগ্রগতি ও কম ক্ষতিকারক বিকল্প

একজন পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে তামাক সেবনের কারণে বাংলাদেশের জনগণ যে অসংক্রামক রোগ (এনসিডি)-এ আক্রান্ত হচ্ছে তা আমি কখনোই উপেক্ষা করতে পারি না। অত্যাধিক মৃত্যুহার, ক্যান্সারসহ তামাক সেবনের কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সংকট মোকাবেলায় বিজ্ঞান-ভিত্তিক সমাধানে আসা অতীব জরুরী। 

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে বছরে ১.২৬ লাখ মানুষ মারা যায়, যা মোট মৃত্যুর ১৩.৫ শতাংশ। এছাড়াও, ধূমপানজনিত রোগের কারণে বার্ষিক ৩০,৫৭০ কোটি টাকা খরচ হয়, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ১.৪ শতাংশ।

২০১৯ সালের বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি থেকে পরিচালিত গবেষণাটি সকলকে এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছিলো। এতে বলা হয়, ৭০ লাখেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক তামাকজনিত রোগে ভুগছেন এবং প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

তামাক সেবনের অভ্যাস ও আসক্তিকে কমাতে গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। টোব্যাকো হার্ম রিডাকশন (টিএইচআর)-এর উপর দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত ডব্লিউএইচও’র পরিচালক রবার্ট বিগলহোল এবং রুথ বনিতার মতবাদ তামাক-সম্পর্কিত মৃত্যু মোকাবেলায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভোক্তাদের তামাকের বিকল্প বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা তাদের গতানুগতিক তামাকজাত পণ্য থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে।

ধূমপায়ীরা সিগারেটকে প্রতিস্থাপন করে অন্য কম ক্ষতিকর সকল বিকল্প বেছে নিয়ে ধূমপানের রেকর্ড-ব্রেকিং পরিমাণ হ্রাস করার ঘটনা শুধুমাত্র সুইডেনেই নয়। কম ক্ষতিকর এইসব বিকল্পগুলো গ্রহণের কারণে নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে সিগারেটের ধূমপানের হার বিশেষভাবে হ্রাস পেয়েছে।

যাইহোক, উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ নীতির জন্য সিগারেটের এই নতুন বিকল্পগুলোকে আলাদা করা প্রয়োজন। বর্তমানে অনেক মানুষ নতুন এই তামাকজাত বিকল্প পণ্যগুলোকে নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, যা এই বিকল্পগুলোকে নিয়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ধীর গতির হওয়ার আরেকটি কারণ। 

সব তামাকজাত দ্রব্য এক নয়। সিগারেটকে বিষাক্ত শ্রেণীবদ্ধ করার কারণ হলো এর দহন। অন্যদিকে, উত্তপ্ত সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেটকে কম ক্ষতিকারক ধোঁয়াবিহীন পণ্যের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই দুই শ্রেণীর পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল কাঁচামাল। ই-সিগারেট নিকোটিনযুক্ত একটি সমাধান ব্যবহার করে যেখানে গতানুগতিক সিগারেট তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। ডব্লিউএইচও বলেছে ই-সিগারেট পণ্য এবং উত্তপ্ত তামাকজাত দ্রব্য (এইচটিপি) উভয়েই নিকোটিন রয়েছে, তবে এর গঠনে পার্থক্য রয়েছে। উত্তপ্ত তামাকজাত দ্রব্যে বিশেষভাবে তামাকের কিছু উপাদান থাকে। ই-সিগারেটগুলো প্রায় পনের হাজারেরও বেশি স্বাদযুক্ত প্রয়োজনীয় তেলের দ্রবণ দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে অনেকগুলো বিষাক্ত। এগুলো যদিও স্বাস্থ্যের প্রভাব সৃষ্টি করে, আগুন এবং বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে এবং দ্রবণে অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ মিশ্রিত করতে পারে। তবুও, বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরামর্শ দেয় যে তারা ঐতিহ্যগত তামাকজাত পণ্যের তুলনায় ৯০ শতাংশ কম ক্ষতিকারক।

তামাকের কথা ব্যাতিরেকে, যে কোনো উপায়ে তরুণদের কাছে থেকে এই বিকল্পগুলোকে বিরত রাখা প্রয়োজন। সুতরাং, এক্ষেত্রে সতর্কতা বাস্তবায়ন এবং প্রবিধান জারি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পণ্যগুলি যাতে অধূমপায়ীদের বিশেষ করে তরুণদের কাছে বাজারজাত করা না হয় সেবিষয়ে দৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি সর্বস্তরে প্রণয়ন করা অপরিহার্য।

বাংলাদেশ ধূমপান-সম্পর্কিত এনসিডি এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে যোগ দিতে প্রচলিত তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক সমাধান পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ই-সিগারেট ও এইচটিপির মতো নিরাপদ বিকল্পগুলো নিয়ে গোঁড়ামি বাদ দিয়ে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে উপযুক্ত প্রবিধান আরোপ করা জরুরী। তবেই বাংলাদেশ কার্যকরভাবে তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে পারবে।

একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে আধুনিক ও সময় উপযোগী কৌশলগুলোকে ক্রমাগত ও কার্যকরভাবে হালনাগাদ করতে হবে। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মোতাবেক এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ৪.৭ মিলিয়ন মৃত্যু হয় শুধুমাত্র তামাকের কারণে। 

যদিও কিছু দেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে, থাইল্যান্ড ও ভারতের মতো অন্যান্য দেশ ডব্লিউএইচও’র নীতি মেনে চলা স্বত্তেও নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। মূলত, প্রধান সমস্যা হলো সিগারেট সেবন নিয়ে, তাই সকল ধরণের তামাকের উপর নীতিমালা আনয়নের চেয়ে মূল বিষয়কে সামনে এনে দৃষ্টি নিবন্ধ করা প্রয়োজন। এই কারণে, অসাবধানতাবশত ধূমপানের ক্রমবর্ধমান ক্ষতিসাধনে অবদান রাখা বিষয়গুলো নিয়ে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। 

স্বাস্থ্যখাতের নীতিনির্ধারক হিসেবে, আমাদের অবশ্যই একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে সোচ্চার হতে হবে এবং গতানুগতিক ও রক্ষণশীল নীতিমালাগুলোকে নমনীয় করতে হবে। যদি নীতিনির্ধারকরা উদ্ভাবনী ও বিকল্প সমাধান গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন, তাহলে ২০৩৫ সালের মধ্যে দাহ্য সিগারেটের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য বিশ্বব্যাপী দলগত প্রচেষ্টা জোড়দার করা যেতে পারে। মনে রাখা উচিত, সম্পূর্ণরূপে ধূমপান ত্যাগ করা যে কারও স্বাস্থ্যের জন্য সেরা সমাধান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, যারা ধূমপান ছেড়ে স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে চান তাদের জন্য নিরাপদ এই বিকল্পগুলো হতে পারে সেরা উল্লেখযোগ্য একটি সমাধান। 

এমবিবিএস, এমডি (বক্ষব্যাধি) 

কনসালটেন্ট

রেসপিরেটরি মেডিসিন এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম