Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

আধুনিক কৃষি যন্ত্রে কৃষি হচ্ছে আধুনিক

Icon

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম

আধুনিক কৃষি যন্ত্রে কৃষি হচ্ছে আধুনিক

প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়েছে, ৫ বছরে অর্থ ২০ শতাংশ সাশ্রায়, সময় ৫০ শতাংশ সাশ্রায়। প্রকল্প গত তিন বছরে ৮০ শতাংশ অর্থ সাশ্রায়, ১৫০ শতাংশ সময় সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। 

দেশের উন্নয়নের ধারার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কৃষি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ। এক যুগেরো বেশি সময় ধরে চলা সরকারের যান্ত্রিকীকরণ উদ্যোগ ব্যাপক ভাবে প্রভাব রাখতে স্বক্ষম হয়েছে শেষ তিন বছরে, আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ২০২০ সালে নেওয়া সমন্বিত ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গ্রামীণ শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখন কৃষিকাজ করে। ২০৩০ সাল নাগাদ তা কমে ২০ শতাংশ হবে। ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া আর বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ একটি প্রতীকী প্রয়াস যার লক্ষ্য কৃষিতে মনুষ্য শ্রমের ঘাটতি দূর  করা, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, ফসল-সংগ্রহত্বর পর্যায়ে ক্ষতি হ্রাস, উৎপাদন খরচের ব্যাপক সাশ্রয়  এবং খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প শীর্ষক কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রথম প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০১০-২০১৯ এই দুই মেয়াদে ১১ বছরে মাত্র ৭২,৬৭৫টি ভর্তুকি যন্ত্র বিতরণ করা হয়। যার মধ্যে পাওয়ার টিলার-৪৭৮৭৩টি, কম্বাইন্ড হারভেস্টার-১৬৪৮টি, রিপার-৪৪৩৬টি, রাইছ ট্রান্সপ্লান্টার-১২৩টি, সিডার-১৯৯১টি, পাওয়ার থ্রেসার-১৫০০৩টি, স্প্রেয়ার-৫০০টি, ফুট পাম্প-১১০০টি। 

বর্তমান প্রকল্পের তিন বছর শেষে সারা দেশে ৮৯১২ টি কম্বাইন হারভেস্টার, ২৩২৯টি রিপার, ৩৭১টি রাইস  ট্রান্সপ্লান্টারসহ ১২ ক্যাটাগরির মোট ৩৫৩৫৯টি কৃষিযন্ত্র কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

প্রকল্প শুরুর তিন বছরের মধ্যেই ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২০০০ শতাংশ। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প শুরুর আগে ২০১৯ সালে দেশে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হতো মাত্র চার শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশে। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ শতাংশ। ফসলের সংগ্রহত্তোর অপচয় (পোস্ট হার্ভেস্ট লস) কমেছে আট শতাংশ। পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস পেয়েছে ৪৫.২৫ শতাংশ, যা প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে আট ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন কৃষক। কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করায় প্রতি একরে আদি পদ্ধতির চেয়ে কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে আট হাজার টাকা। 

সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি একর জমির ধান কাটা, ধানসহ খড় পরিবহন, মাড়াই, ঝাড়াইয়ে খরচ হয় ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। আর একই পরিমাণ জমির ধান কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও পরিবহন বাবদ খরচ হয় ছয় হাজার টাকা। অর্থাৎ কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে প্রতি একরে কৃষকের খরচ কমছে আট হাজার টাকা। আউশ, আমন ও বোরো মৌসুম মিলিয়ে এক বছরে কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহার করে কৃষকদের প্রায় তিন হাজার পঞ্চাশ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।। কম্বাইন হারভেস্টার এর কারণে যেখানে ১টি ফসল হতো সেখানে এখন ২টি ফসল যেখানে ২টি ফসল হতো সেখানে ৩টি ফসল হচ্ছে।

গত আমন ও বোরো মৌসুমে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটার ফলে সংগ্রহত্তোর অপচয় ১০ শতাংশ  থেকে কমে দুই শতাংশ চলে এসেছে। শস্যের অপচয় রোধ ৪,১৩,৭১৬ টন যার বাজার মূল্য ১০১৮ কোটি টাকা। ফলে কৃষক আট শতাংশ ধান বেশি পাচ্ছে। এছাড়া, কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করে কৃষক কম সময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারছে। সময়মতো ফসল সংগ্রহ করায় সংগ্রহত্তোর ক্ষতি অনেক কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই কৃষক ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারছেন। সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের সময়। হ্রাস পাচ্ছে কৃষকের কায়িক শ্রম। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকের লাভের পরিমাণ বাড়ছে। কম্বাইন হারভেস্টারের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। জাতীসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এক জরিপে দেখা যায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী চাল উৎপাদনকারী দেশ হবে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় চীন ও ভারতের পর তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে নতুন ধানের জাতসহ যন্ত্র নির্ভরতা বাড়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তারিক মাহমুদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক বলেন, দেশে এখন সনাতন পদ্ধতির কৃষি থেকে যান্ত্রিকীকরণ কৃষির রূপান্তর ঘটছে। আগের যেই কোন সময়ের তুলনা বর্তমানে কৃষকের কাছে বেশি কৃষি যন্ত্রপাতি পৌঁছানোর কারণে হঠাৎ বড় একটি বাজার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিক্রয় পরবর্তী সেবা প্রয়োজনিয়তা দেখা দিয়েছে। এখন আমাদের বিক্রয় পরবর্তী সেবা কৃষকের কাছে কিভাবে সহজ করা যায় তা নিয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা এখন আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মোকাবেলা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ে আমরা এর একটি ভাল ফলাফল পাব। পূর্বে বিক্রয় পরবর্তী সেবা প্রয়োজনীতা কখনো দেখা দেয়নি কারণ ২০১০-২০১৯ দুই মেয়াদে ১১ বছরে কৃষকের কাছে যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছিল মাত্র ৭২,৬৭৫ টি যা প্রয়োজনের তুলনা অনেক কম। 

তিনি আরো জানান, অবসর সময়ে যন্ত্র কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সে বিষয়ে আমরা কৃষকদের সচেতন করছি এবং প্রতিটা উপজেলা যন্ত্র সংরক্ষাণ আকার তৈরি করছি। পাশাপাশি আমরা একটি হটলাইন চালু করেছি, যাতে কৃষক তার কৃষিযন্ত্রের যে কোনো সমস্যার কথা আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে পারি। এছাড়া কোম্পাানিগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলছি, তারা যাতে কৃষিযন্ত্র বিক্রির পর বিক্রয়োত্তর সেবা সঠিকভাবে দেয়। একটি ডাটা বেইজ তৈরি করছি যার সাহায্যে অনলাইনে দেখা যাবে কোন কৃষক কোন মডেলের যন্ত্র পেয়েছে। এই সব উন্নয়ন কাজগুলো আমি আসার পর করেছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা যে সকল উদ্দ্যোগ গ্রহন করেছি তা সঠিক ভাবে বাস্তবায় করতে পারলে বাংলাদেশের কৃষির যান্ত্রিকীকরণের একটি বিরাট পরিবর্তন আসবে।   
আলতাফুন নাহার, উপ-প্রকল্প পরিচালক জানান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কারণে দেশে কৃষিযন্ত্র ব্যবসায় নতুন নতুন কোম্পানি আসছে। আগে কৃষিযন্ত্রের ব্যবসার সঙ্গে ১৪টি কোম্পানি জড়িত ছিল। এখন সেখানে ৪০টি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা সঠিক মূল্যে কৃষিযন্ত্র কিনতে পারছেন। কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে খুচরা যন্ত্রাংশের চাহিদা বাড়ছে। 

এক সময় ধান রোপণ, কাটা, মাড়াইসহ অন্যান কাজে যন্ত্রের ব্যবহার ছিল খুবই কম। ২০১৯ সালে ধান রোপণের যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহার ছিল এক শতাংশের নিচে। কিন্তু বর্তমানে ধান রোপণের রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। এছাড়া ধান কাটা রিপার যন্ত্রের ব্যবহার ১৮৫ শতাংশ, বীজ বপন ও জমি চাষ করার সিডার যন্ত্রের ব্যবহার ৬৯৭ শতাংশ, মাড়াই পাওয়ার থ্রেসার যন্ত্রের ব্যবহার ১৯৩ শতাংশ এবং মেইজশেলার যন্ত্রের (মাড়াই) ব্যবহার ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি যান্ত্রিকীকরনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। বিকল্প ভাবে ধান রোপনের প্রথাগত পদ্ধতি শ্রম-নিবিড় এবং এতে উচ্চ পরিশ্রম জড়িত। যান্ত্রিক রাইস ট্রান্সপ্লান্টার সাশ্রয়ী এবং শ্রমবান্ধব। এখন পর্যন্ত ৩৪ জেলার অধীনে ২৫৫ টি ট্রান্সপ্লান্টার সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ সালে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহার ছিল এক শতাংশের নিচে। সমন্বিত ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকিকরন প্রকল্প গত ২ বছরে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। ইতোমধ্যে সারাদেশে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকিকরন প্রকল্প হতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। উদ্যোক্তারা নিজেরা অর্থনৈতিক উন্নয়েনের পাশাপাশি কৃষকের সময়-অর্থ দুই সাশ্রয় করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

এই প্রকল্পের অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিক হলো নারীদের কৃষিতে অংশ গ্রহন করা। তারই ধারাবাহীকতায় এই প্রকল্পের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সারা বাংলাদেশে মহিলা উদ্যোক্তা/লোকাল সার্ভিস প্রোভাইটার হিসাবে তৈরী হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন প্রমিলা মন্ডল। সরকারের সমন্বিত ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকিকরন প্রকল্প হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫০% ভর্তুকি সহায়তায় ১টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার নিয়েছেন প্রমিলা। নিজেই চালাচ্ছেন রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মত জটিল যন্ত্র, নিজেই ট্রেতে চারা উৎপাদন করছেন। আর একরের পর একর জমিতে যন্ত্র চালিয়ে বপন  করে দিচ্ছেন ধানের চারা। 

মহিলারা চালাচ্ছেন কম্বাইন হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার সহ আধুনিক কৃষি যন্ত্র।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে ঘিরে সারা দেশে খুচরা যন্ত্রাংশের বিশাল বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে এক অন্যান  মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। অনেক স্বল্প ও উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক এ প্রকল্পের আত্ততায় ২৮ দিনের আবাসিক মেকানিক প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকুরী না করে কম্বাইন হারভেস্টার ভুর্তুকিতে ক্রয় করে বিভিন্ন জেলায় ধান কর্তন করে উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসিক মেকানিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩২১০ জন। এভাবে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করে একজন ছাত্র চাকুরী না পেয়ে কম্বাইন হারভেস্টার ভর্তুকিতে ক্রয় করে বিভিন্ন জেলায় ধান কর্তন করে উদ্যোক্ত হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

হাওয়েরে শ্রমিক সংকট কাটাতে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আনা হতো। ধান কাটার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হতো স্থানীয় বালু মহালাগুলো। বর্তমানে শ্রমিক সংকট দেখা যায় না। উল্টো দ্রুত ধান কেটে সময় ও অর্থের সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।

এই প্রকল্পের সহযোগীতার মাধ্যমে কারিগরি কমিটির পরামর্শক্রমে আনসার এনাজি লিঃ (বাংলাদেশ) কম্বাইন হারভেস্টার বাংলাদেশে তৈরী করে কৃষকের মাঝে ইতোমধ্যে উন্নয়ন সহায়তায় (ভর্তুকি) ২০ টি কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকের মাঝে বিতরণ করেছেন। যা বাংলাদেশের জন্য একটি মাইল ফলক। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম