মঙ্গলবার শিল্পপতি রেজাকুল হায়দারের মৃত্যুবার্ষিকী
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
১৯৫৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অদুরে অবস্থিত সন্দ্বীপ উপজেলার জনাব মুন্সী আব্দুল মান্নান ও জিন্নাতের নূরের কোল জুড়ে জন্মগ্রহন করেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্প গোষ্ঠী ইয়ুথ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও চেয়ারম্যান জনাব রেজাকুল হায়দার।
হায়দার তৈরি পোশাক, বিদ্যুৎ উৎপাদন কাঠামো, জ্বালানী তেলের পরিশোধন, এলপি গ্যাস আমদানি ও বাজারজাতকরণ এবং স্টিল সিলিন্ডার উৎপাদন কাঠামো হতে শুরু করে বহু শিল্প কারখানার ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি তাঁর বিশ্বস্ত অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে সূচনা করেন আর্থিক খাত ও জীবন বীমা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের। একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুখ্যতি ছিল।
তিনি আন্তর্জাতিক মানের স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তার ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতায় তৈরি এসকল প্রতিষ্ঠানগুলো আজ প্রায় ১৬০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তার বর্ণীল কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি ইয়ুথ গ্রূপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মানবসেবা ছিল তাঁর চরিত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিপদগ্রস্ত মানুষের চরম বন্ধু হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে।
আশির দশকের শুরুর দিকে জনাব হায়দার তাঁর বিশ্বস্ত সমমনা বন্ধুদের নিয়ে একটি ছোট্ট তৈরি পোশাক কারখানার মাধ্যমে তাঁদের ব্যবসায়িক মহাযাত্রা শুরু করেন। সময়টি ছিল বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান বিস্তারের সূচনা লগ্ন। হায়দার তার অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা, ব্যবসায়িক দূরদর্শিতা ও যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে খুব অল্প সময়ে সাফল্য পান। পরবর্তীতে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের নিয়ে ইয়ুথ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ইয়ুথ গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা ও সঙ্গবদ্ধ বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করা হয় এবং আর্থিক ভাবে বেশ মুনাফা অর্জিত হয়।
সম্প্রসারণ নীতি হিসেবে জনাব হায়দার তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে আনুশাঙ্গিক উপকরন ও প্রিন্টিং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। হায়দারের নেতৃত্বে ইয়ুথ গ্রুপ সবসময় টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করে আসছে। ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ ও কৌশল নির্ধারনে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গুলোকে সর্বোচ্চো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে ব্যবসায়িক প্রবাহ নির্ধারণে ইয়ুথ গ্রুপ বিনিয়োগ করে কোমল পানিয় খাতে। বাংলাদেশে ভার্জিন ড্রিংকস (একটি রিচার্ড ব্রেনসন কোম্পানি) বোতলজাত ও বাজারজাতকরণে প্রথম বিনিয়োগ করে ইয়ুথ গ্রুপ।
ব্যবসায়িক বৈচিত্র্য ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে জনাব হায়দার বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে বিনিয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা গভীর ভাবে অনুধাবন করেন। অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে ইয়ুথ গ্রুপ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানী তেল শোধনাগার কাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন।
এ সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০০ মেঃওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং জ্বালানী তেল শোধনাগার হতে প্রিমিয়াম গ্রেড অকটেনের মোট দেশজঃ চাহিদার প্রায় ৫০ ভাগ পূরণ করে চলেছে। এরই ধারবাহিকতায় ইয়ুথ গ্রুপ এলপি গ্যাস সংরক্ষণ, বোতলজাত ও বাজারজাতকরণ খাতে বিনিয়োগ করেন।
জনাব হায়দার তাঁর প্রয়ানের পূর্বে নিম্নে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান সমূহের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেনঃ কম্ফিট কম্পোসিট নীট লিমিটেড, শাহজীবাজার পাওয়ার কো লিমিটেড, পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড, ইসলামিক ফাইন্যন্স এন্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড
এছাড়াও জনাব হায়দার মিডল্যন্ড পাওয়ার, মিডল্যন্ড ইষ্ট পাওয়ার, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশন, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পনানিতে বিভিন্ন সময়ে পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দেশের মূল ভূখণ্ড হতে বেশ দূরে অবস্থিত দুর্গম উপজেলা হওয়ায় দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অনেক নাগরিক ও আধুনিক সেবার উন্নয়নে সন্দ্বীপ বেশ পিছিয়ে ছিলো। যৎসামান্য মাথাপিছু আয় ও ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফলস্বরূপ সন্দ্বীপবাসি সবসময় উন্নত চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্ছিত ছিল। দেশের অন্ন্যান্য জেলার তুলনায় মা ও শিশু মৃত্যুর হার সন্দ্বীপে আশঙ্কাজনক হারে বেশী।
ছোট বেলা থেকে দ্বীপ বাসির এহেন দুর্দশা দেখে বড় হন জনাব হায়দার। আর তাই ব্যবসায়িক সফলতার বাইরে এসে তাঁর মানবসেবার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য গঠন করেন স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ফাউন্ডেশনের অধীনে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নামে সন্দ্বীপে একটি ২০ (বিশ) শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপনার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্ছিত ও দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত জীবনে জনাব রেজাকুল হায়দার ও জনাবা সফুরা হায়দার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁদের দুই সন্তান জনাব আকবর হায়দার মুন্না ও জনাব আজগার হায়দার মিখু। বর্তমানে জনাব আকবর হায়দার মুন্না ইয়ুথ গ্রুপের ভাইস চেয়ারপার্সন ও আজগার হায়দার মিখু ইয়ুথ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জনাব হায়দার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২1 সালের ২৩এ এপ্রিল ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেন।