ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো হলেও চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি: নুমায়ের
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
ব্যবসা-বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ, উত্তরণের উপায়, কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন ও সাফল্যের স্বীকৃতিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রধান নুমায়ের আলম।
দৈনিক যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার গত ২০ বছরের কর্মজীবনে ব্র্যান্ড ফোরামের অ্যাওয়ার্ড পাওয়া বড় স্বীকৃতি। এজন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং জুড়ি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই।
সফল ক্যারিয়ার ও ব্যবসায়িক সাফল্য প্রসঙ্গে নুমায়ের বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, চাকরি এবং নিজের জীবনের মধ্যে একটা সামঞ্জ্য থাকতে হয়। ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হয়। এটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ৫ থেকে ৭ বছর কাজ করার পর। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটা সময় পরে অনুধাবন করা দরকার কোন জিনিসটি করতে ভালো লাগে, আর কোনটি আমি ভালো পারি। আস্তে আস্তে এটাকে আস্থায় নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিতে হয়। কারণ সবাই সবকিছু ভালো পারে না, কে কোনটি ভালো পারে সেটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন, কারণ মানুষ পরিচালনা করা বড় কাজ। সবার মতামতগুলো শোনা, উদ্দেশ্যমূলক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা। সাফল্য অর্জনের জন্য এই বিষয়গুলো আমার কাছে মেৌলিক উপাদান মনে হয়। এর মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও উন্নয়ন সম্ভব হয়। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানের লিডারশীপ টিমের সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চাকরির শুরুতে অন্তত প্রথম ৩-৫ বছর খোলা মনের হলে ভালো। শুরুতে জ্ঞানের পরিধিটি বাড়ানো গেলে সামনে ভালো কিছু করা সম্ভব। নিজের আইডিয়াগুলো শেয়ার করা। যেকোনো চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত থাকা। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আমাদের থেকে গতিশীল। ওরা অনেক কিছুই জানতে চায়, বুঝতে চায়। তাই ওদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমাদের মতো সিনিয়রদেরও- তরুণদেরকে বুঝতে হবে, তাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশতে হবে এবং উন্মুক্ত মন নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
যে কোন উদ্যোগে সাফল্যের ক্ষেত্রে পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী মানষিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সাফল্যের জন্য পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী মানষিকতা দুইটিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যেকোনে উদ্যোগের ক্ষেত্রে এ দুটিই থাকতে হবে। তা না হলে সাফল্য আসবে না। কারণ উদ্ভাবনী মানষিকতা তখনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, যখন সেটার বাস্তবায়ন হয়। আর এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।
নারী কর্মীদের জন্য বৈষম্যমুক্ত ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন,বিএটি বাংলাদেশ নারী কর্মীদের জন্য সবসময় ভালো একটি কর্মপরিবেশ দিয়ে থাকে। ১৯০ জনের মতো নারী কর্মী রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। কারখানা এবং সেলসেও উল্লেখযোগ্য নারী কাজ করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীর সংখ্যা ৩৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে ও ভালো পারফরমেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএটি মাঠপর্যায়ের কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই মাঠপর্যায়ের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে নানান প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিপণন টিমের সকলকেই বাধ্যতামূলক একটা সময় মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হয়। সেখানে ব্যবসা কিভাবে হয়, কি কি জিনিস ব্যবসায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা মাঠপর্যায় ছাড়া বুঝা যায় না। ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে একটা সময় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা প্রয়োজন।
ব্যবসার সার্বিক সাফল্যের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে আমরা অনেক আগে থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। তবে এটির ব্যবহার কোভিডের সময় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের কম্পানিতে দেশি ও বিদেশি দুই ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার হয়।
বিএটি বাংলাদেশ করপোরেট দায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএটি বাংলাদেশ ১৯৮০ সাল থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দেশের ২৩ জেলায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি গাছ দেওয়া হয়েছে। এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাঁচবার পুরস্কারও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের ২২টি জেলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কার্যক্রমটি ২০০৯ সাল থেকে শুরু করা হয়।
বিপণণে যারা ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএটিতে সবার কাজ করা সুযোগ রয়েছে। কৃষিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায় প্রশাসনসহ যেকোনো বিষয়ে পড়াশুনা করে এখানে ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। কারণ এই ব্যবসার পরিধি অনেক বড়। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও অত্যন্ত স্বচ্ছ। এই কম্পানিতে প্রতিবছর প্রবৃদ্ধি হওয়ায় কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বেশ ভালো।
বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের ব্যবসার স্থিতিশীলতা রয়েছে। ব্যবসায়িক পরিবেশও ভালো। তবে আমাদের বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ মুদ্রাস্ফীতি। আমাদের বেশ কিছু কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চমুল্যস্ফীতি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রভাব ইতিমধ্যে আমাদের এই খাতেও পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবমিলিয়ে অন্যান্য খাতের মতোই এই খাতটি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে যাচ্ছে। ডলার সংকট পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সরকার নানাভাবে চষ্টো চালাচ্ছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং রাজস্ব আদায়ে সরকারকে আরো জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই এই সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।