Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

থ্যালাসেমিয়া: নিজে জানি, যত্নবান হই, অপরকে সচেতন করি

Icon

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ০৮:২১ পিএম

থ্যালাসেমিয়া: নিজে জানি, যত্নবান হই, অপরকে সচেতন করি

আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস, প্রতিবারের ন্যায়ে এই বার বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ দিন ব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচী মাধ্যমে দিনটিকে উৎযাপন করেছে। 

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদের যৌথ ভাবে ঢাকায় দিনব্যাপী রোড শো, এম টি বি ফাউন্ডেশনে স্বেচ্ছায় রক্ত দান কর্মসূচী ও চট্টগ্রামে থ্যালসেমিয়া সংক্রান্ত জনসচেতনতা মূলক সেমিনার  আয়োজন করেছে। 

বিশ্ব থ্যালসেমিয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রোড শো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি উপদেষ্ঠা ও প্রাক্তন মন্ত্রী সৈয়দ দীদার বখত, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির উপদেষ্ঠা ও দেশ খ্যাতিমান রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এম এ খান, এম টি ফাউন্ডেশনের সি ই ও সামিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির সভাপতি ড. এম এ মতিন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. এ কে এম একরামুল হোসেন স্বপন ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. কবিরুল ইসলাম সহ গ্রুপ কিউ এ র গ্রুপ হেড অব এইচ আর ও ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের উপদেষ্ঠা মো. শহীদুল ইসলাম রাজন, স্মার্ট টেকনোলজি বাংলাদেশর পরিচালক ও ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা মুজাহিদ আল বিরুনী সুজন এবং ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদের সদস্যগণ। 

উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির সভাপতি ড. এম এ মতিন। 

জনস্বাস্থ্য প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য থ্যালাসিমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা। এটি মূলত জীনগত ও জন্মগত একটি রক্তশূন্যতাজনিত রোগ। আক্রান্ত রোগীদের সারাজীবন চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। যেমন বারবার রক্ত পরিসঞ্চালন করা, আয়রন কমানোর ঔষধ সেবন ইত্যাদি। সামষ্টিক চিকিৎসা ব্যায় অনেক বেশি। যেহেতু বংশগত রোগ তাই পিতা ও মাতা উভয়েই যদি থ্যালাসিমিয়ার বাহক হন তবে অনাগত সন্তানের থ্যালাসিমিয়া রোগ হতে পারে। 

উল্লেখ্য যে বাহকের নিজের তেমন কোন শারিরীক সমস্যা থাকে না। তাই বাহক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব থাকে। অথচ রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রফরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই নির্ণয় করা যায়। 

দেশে শতকরা ১০-১২ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোগ্লোবিন-ই বাহক অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১.৫ কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের জীন বহন করে। থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তস্বল্পতা জনিত মারাত্মক বংশগত রোগ। বাবা এবং মা উভয়ই এই রোগের জীন বহন করলে সন্তানেরা এই রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। 

বাংলাদেশে এখন এই সঠিক কোন তথ্য উপাত্ত নেই তবে বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয় দেশে প্রতি বছর ৮০০০-১৫০০০ শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। আর এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। 

থ্যালাসেমিয়াকে আমাদের দেশে হতে নির্মূল করতে হলে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। বিবাহরে আগে প্রত্যেক তরুণ তরুণীর রক্তের একটি পরীক্ষা ( হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরসিস) করে জনে নিতে হবে সে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কিনা? বাহক নির্ণয়ের পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত ও উন্নত মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যবস্থা করে হবে এবং মানুষ কে আরো সচেতন করতে হবে যাতে তারা তাদের বাহক নির্নয় পরীক্ষা করে এবং বাহকে বাহকে বিবাহ বন্ধ করে। 

মানুষকে সচেতন এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের যথাপুযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা যাতে নিশ্চিত করা হয় এই লক্ষ্যে এই বছরের প্রতিপাদ্য – “ থ্যালাসেমিয়াঃ নিজে জানি, যত্নবান হই এবং অপরকে সচেতন করি।    

এখনি সময় এই রোগ নিয়ে সকল মহলের যথাপুযুক্ত উদোগ্য গ্রহণ করতে হবে এবং আমাদের সকলকে মিয়ে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ গড় তোলতে হবে। 

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রোড শো ও সচেতনতা মূলক কর্মসূচীর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতাল ও ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের উপদেষ্ঠা ডা. এ কে এম একরামুল হোসেন

তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আজকের তরুণেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ , বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করতে হলে প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই আর তা করতে পারবে শুধুমাত্র তরুণেরা। শুধুমাত্র বিয়ের আগে একটি রক্ত পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরসিস) টেস্ট করে জানতে পারবে সে বাহক কিনা বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি খুবই অল্প খরচে এই টেস্ট করে দেয়। 

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতাল একটি অলাভজনক স্বেচ্ছা সেবী প্রতিষ্ঠান যা থ্যালাসেমিয়া রোগী ও তাদের বাবা মা  দ্বারা পরিচালিত ও গঠিত। আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য উন্নত ও মান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে এবং পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার জন্য। তিনি তাঁর স্বগত বক্তব্য ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই আজকের এই আয়োজন কে সুন্দর ও সফল করে করার জন্য । 

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির উপদেষ্টা ও প্রাক্তন মন্ত্রী  সৈয়দ দীদার বখত বলেন, প্রতিরোধেই প্রতিকার ; আমাদের এখনই সময় থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে আরও সচ্চার হওয়া। আমাদের দেশে দিন দিন এই রোগের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল এবং এই রোগের বেশীরভাগ রোগীই অনেক গরীব। আগে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের আয়রন চিলেশন ঔষধ দেশের বাহির হতে আনতে হয় তবে এখন শুখবর এই যে আমাদের দেশেই এই আয়রন চিলেশন ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে । আমি সরকার কে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই যে তারা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য একটি মানসম্মত গাইড লাইন প্রদান করেছে । তবে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্ত বানদের এগিয়ে আসতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদান করলে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখা যায়। 

অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. এম এ মতিন সকলের উদ্দেশ্য বলেন শুধু ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসই নয় আমাদের প্রতিদিন থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য এবং তা প্রতিরোধের জন্য কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশ থ্যালসেমিয়া সমিতি ১৯৮৯ সাল হতে শুরু হওয়ার পর হতই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দানে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মাত্র দুই বেড নিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি তবে দিন দিন আমরা থ্যালসেমিয়া রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা দানে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করছি। আমরা আমাদের থ্যালসেমিয়া রোগীদের সরকারের প্রদত্ত গাইডলাইন ও আন্তর্জাতিক থ্যালসেমিয়া ফেডারেশনের গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকি। 

আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ৪০০০ অধিক রেজিষ্টাড রোগী এবং প্রতিমাসে ১০০০-১৫০০ রোগী বিভিন্ন ভাবে সেবা প্রদান করে আসছে। আমরা বিভিন্ন ভাবে সমাজের কিছু হৃদয়বান মানুষের সাহায্য ও সহযোগিয়ার প্রায় ৫০০ মত গরীব রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারছি তবে তা অতি নগণ্য । কারণ আমদের বেশীরভাগ রোগী অতি গরীব তারা পূনাঙ্গ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। আমি সবাই কে অনুরোধ করব জনসচেতনতার পাশা পাশি থ্যালসেমিয়া গরীব থ্যালসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। 

আজকের এই কর্মসূচীকের সুন্দর আর সার্থক করার জন্য বাংলাদেশ থ্যালসেমিয়া সমিতির ও ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের প্রতিটি  সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই । প্রতিরোধই হোক মুক্তি এই আশা ব্যক্ত কররে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কো-অডিনেটর সাদিয়া আহসান।  

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম