Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

শিশুর শীতকালীন রোগ নিরাময়ে করণীয়

Icon

ডা. আজমেরী সুলতানা চৌধুরী

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিশুর শীতকালীন রোগ নিরাময়ে করণীয়

শীতকাল এসে গেছে। ঋতু পরিবর্তনের এ মৌসুমে শিশুরা ঠান্ডা, কাশি, সর্দি, হাঁচি, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে, বাড়ে ধুলাবালির উপদ্রব। এ সময় শিশুরা ব্রংকিওলাইটিস, অ্যাজমা (অ্যালার্জিজনিত), নিউমোনিয়া রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সর্দি-জ্বর দ্রুত সেরে গেলেও কাশি সহজে সারে না। বিস্তারিত লিখেছেন ডা. আজমেরী সুলতানা চৌধুরী

* ব্রংকিওলাইটিস

শীত ও বর্ষাকালে শিশুরা যে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগে তা বেশির ভাগই নিউমোনিয়া নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি আরএস ভাইরাসজনিত ব্রংকিওলাইটিস। তবে অনেকেই একে নিউমোনিয়া ভেবে ভুল করেন। দুবছরের কম বয়সি শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রংকিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা করা যায়। তবে আক্রান্তকে সুস্থ শিশুদের থেকে দূরে রাখতে হবে। এ রোগের লক্ষণ হলো-নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো আওয়াজ, হালকা জ্বর, ঘুমের অসুবিধা, খাবারে অরুচি, শ্বাসকষ্ট বেশি হলে ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া। শীতকালে শিশুরা যেসব প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয়ে থাকে পরিবারের বড়দের অসচেতনতা ও ভুল জীবনযাপন পদ্ধতির জন্য।

* পরীক্ষা-নিরীক্ষা

সাধারণত ব্রংকিওলাইটিসে আক্রান্ত হলে বাড়িতেই চিকিৎসা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে রোগীকে কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে, মাথা উঁচু করে শোয়াতে হবে। নাক পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। তবে জটিলতা সৃষ্টি হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। পরিস্থিতি বুঝতে বুকের এক্সরে, সিবিসি টেস্ট করা যেতে পারে। যদি শিশু মুখে খেতে না পারে তাহলে স্যালাইন, অক্সিজেন, নেবুলাইজেশন দিতে হবে।

* শীতকালে অ্যাজমা রোগীদের করণীয়

▶ যাদের হাঁপানি বা অ্যালার্জি আছে তারা ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন। শীত উপভোগের মতো বিলাসিতা এসব রোগীর জন্য নয়।

▶ সকালে বা সন্ধ্যায় হাঁটার অভ্যাস থাকলে সময়টি বদলে নিন। এ দুই সময় আবহাওয়ার তারতম্য বেশি হয়। শিশির-কুয়াশার ফলে ঠান্ডা বেড়ে যেতে পারে।

▶ এসময় বাতাসে ধুলাবালি, উড়ন্ত ফুলের রেণু কণা বেশি থাকে। ফলে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন।

▶ মাফলার, টুপি, হাতে-পায়ে মোজা এবং গায়ে গরম কাপড় রাখবেন। খালি পায়ে হাঁটবেন না।

▶ বাড়িতে ইনহেলার, নেবুলাইজার এবং অন্যান্য প্রাথমিক ওষুধ রাখবেন। এসবের মেয়াদ আছে কিনা, তা অবশ্যই লক্ষ রাখবেন।

▶ বয়স্কদের জন্য বয়স্ক টিকা বা অ্যাডাল্ট ভ্যাকসিনেশন জরুরি। প্রতিবছর শীত শুরুর আগে একটি করে ফ্লু ভ্যাকসিন নিলে হাঁপানি রোগী শীতে অনেক ভালো থাকবেন।

▶ শোবার ঘরে অতিরিক্ত মালামাল রাখবেন না। জিনিসপত্র ঢেকে রাখবেন, যাতে ধুলাবালি না ওড়ে।

▶ ধূমপানের অভ্যাস থাকলে দ্রুত পরিহার করুন।

* অ্যাজমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা

▶ স্পাইরোমেট্রি বা পিকফ্লোমেট্রি পরীক্ষা : রোগীর শ্বাসনালিতে শ্বাস গ্রহণে বাধা আছে কিনা, তা নির্ণয়ের জন্য এটি করা হয়।

▶ মেথাকলিন চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা : এর মাধ্যমে শ্বাসনালির অতি সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করা হয়।

▶ রক্ত পরীক্ষা : শ্বাসনালিতে ইয়োসিনোফিল ও অন্যান্য নানা কোষীয় উপাদান জমা হয়ে শ্বাসনালি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। রক্তে ও কফে এ ইয়োসিনোফিল ও সিরাম আইজিইয়ের মাত্রা বেশি আছে কিনা, তা নির্ণয় করা হয়।

▶ স্কিন প্রিক টেস্ট : অ্যালার্জেন বা ট্রিগার পরীক্ষার জন্য এ টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ অ্যালার্জেন রোগীর ত্বকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

▶ অ্যালার্জি প্যানেল টেস্ট : বর্তমানে অ্যালার্জি প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করে অ্যাজমা রোগীর কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি আছে, তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।

* অ্যাজমার ক্ষেত্রে খাবারের ভূমিকা

ব্যক্তিবিশেষে খাবারের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ খেলে কারও কারও অ্যাজমার সমস্যা হয়। আবার কারও বেগুন খেলে সমস্যা হয়। সাধারণত বেগুন, পুঁইশাক, চিংড়ি, ইলিশ, গরুর মাংস, পাকা কলা, হাঁসের ডিম ইত্যাদি খাবার অ্যাজমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

* অ্যাজমা রোগীদের জন্য উপকারী খাবার

খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাজমা রোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। অ্যাজমা রোগীদের জন্য শাকসবজি খুবই উপকারী। এখন প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যায়। এ ছাড়া গাজর, আপেল, ব্রকলি, আদা, রসুন, মধু, আদা চা হাঁপানি প্রতিরোধে কার্যকর।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ডিপার্টমেন্ট অব পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড নিওনেটোলজি, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম