শিশু কেন অমনোযোগী হয়
অধ্যাপক ডা. মো. মনজুর হোসেন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অনেক মা-বাবাকেই বলতে শোনা যায়, আমার ছেলে বা মেয়েটা পড়াশোনায় একদম মনোযোগী নয়। বই নিয়ে বসতেই চায় না। কেন এমন হয়? এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেশি টিভি দেখা, কম্পিউটার, মোবাইল বা টিভিতে গেমস খেলা। কিছুদিন আগেও শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসাবে অতিরিক্ত টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলাকে দায়ী করা হলেও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও একটি নতুন গবেষণার ফল। ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া এ রকম শতাধিক শিশুর ওপর ২০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার ফল থেকে দেখা গেছে, যেসব শিশু প্রতিদিন দুই ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় টিভি দেখেছে বা ভিডিও গেমস খেলেছে, তারা অন্য শিশু, যারা তেমন একটা টিভি দেখেনি বা ভিডিও গেমস খেলেনি, তাদের তুলনায় শ্রেণিকক্ষে উল্লেখযোগ্য হারে কম মনোযোগী। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, টিভি বা ভিডিও গেমসের ছবিগুলো দ্রুতগতিতে ও অতিমাত্রায় পরিবর্তিত হয়। যা বাড়ন্ত শিশুদের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রভাব ফেলে। এতে শিশুরা চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে যায় এবং পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। শিশুদের কেউ কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে বললে তারা সেটা অতটা গুরুত্বসহকারে নেয় না, পর মুহূর্তেই ভুলে যায়। ফলে তারা শুধু পড়াশোনা নয়, সব ক্ষেত্রেই অমনোযোগী হয়ে ওঠে। শিশুরা বেশি মাত্রায় টিভি বা ভিডিও গেমস খেললে বেশি সময়ই শুয়ে-বসে কাটায়। ফলে তাদের শরীরে ধীরে ধীরে মেদ জমতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা মুটিয়ে যায়। শরীরে মেদ বাড়লে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয় এবং শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের (চোখ, মস্তিষ্ক) সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তনালিতে খাদ্যকণা পৌঁছাতে পারে না। ফলে সেসব অঙ্গ অপুষ্টির শিকার হয়। এতে দেখা যায়, স্বাভাবিক ওজনের শিশুর তুলনায় মুটিয়ে যাওয়া শিশুরা কম বুদ্ধিমান হয় এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বা কোনো কিছু মনে করতে বেশি সময় নেয়। এভাবেই তারা সব কিছুতে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে থাকে। চালচলনেও তারা অপেক্ষাকৃত ধীরগতিসম্পন্ন হয়। শিশুদের অতিরিক্ত টিভি দেখা ও ভিডিও গেমস খেলার পেছনে মা-বাবারাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মা-বাবা বেশি মাত্রায় টিভি দেখলে এর প্রভাবও বাচ্চাদের ওপর পড়ে। যেমন-অনেক সময় মা-বাবা যখন টিভি দেখেন, শিশু তাদের সঙ্গে বসে টিভি দেখে। টিভি দেখার শব্দও অনেক সময় শিশুর পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাই তারা যদি টিভি দেখা কমিয়ে দেন তাহলে সেটা শিশুর জন্য মঙ্গলজনক। শিশুর টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলার ক্ষেত্রে মা-বাবা একটা নিয়ম করে দিতে পারেন, যাতে তারা প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় না করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত টিভি দেখা ও ভিডিও গেমস খেলার ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়েও শিশুর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন এবং তাদের বুঝিয়ে বলতে পারেন। যেসময় শিশুরা বেশি টিভি দেখে ও ভিডিও গেমস খেলে, ওই সময় তাদের অন্যান্য খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত করা যেতে পারে। যেমন-দিন হলে বাইরের কোনো খেলা আর রাত হলে ঘরে কোনো খেলা (ইনডোর গেমস) ইত্যাদিতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এতে যেমন তারা অমনোযোগী হওয়া থেকে মুক্ত থাকবে, তেমনি মুটিয়ে যাওয়া বা বুদ্ধির বিকাশ কমে যাওয়া থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারবে সহজেই।
লেখক : শিশুরোগ ও শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, সাবেক অধ্যাপক ও পরিচালক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল।