Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

শিশুর বড় এডিনয়েড অস্ত্রোপচার না করালে যা হয়

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৫ পিএম

শিশুর বড় এডিনয়েড অস্ত্রোপচার না করালে যা হয়

শীতকালে কিছু শিশুর শর্দি কাশি লেগেই থাকে। টনসিল ও এডিনয়েড গ্রন্থিও বড় হয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা নিলে শিশু ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু শিশুর এডিনয়েড সহজে ভালো হয় না। ৮-৯ বছরের পরও যদি এডিনয়েড বড় থাকে তবে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হলে কখন অস্ত্রোপচার জরুরি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী। 

এডিনয়েড গ্রন্থি কী

নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি থাকে। এটি গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতো। এডিনয়েড বাইরে থেকে দেখা যায় না। কারণ আমাদের তালুর ওপরে এডিনয়েড থাকে। কাজেই এটা খালি চোখে দেখার কোনো উপায় নেই। 
এডিনয়েড দেখতে হলে এক্স-রে করতে হবে বা বিশেষ ধরনের অ্যান্ড্রোস্কোপ (Nasoendoscope) আছে, সেগুলো দিয়ে দেখা যেতে পারে।

শিশুর ঘনঘন ঠান্ডা লাগার কারণে নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। যার কারণে নাকের মাংস বাড়ে।
এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হলে যেসব সমস্যা হয়

১. শিশু মুখ হাঁ করে ঘুমায়। রাতে ঘুমের মধ্যে শব্দ হয় বা নাক ডাকে। এ সমস্যা বেশিমাত্রায় হলে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে। যাকে চকিং বলে। ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য দম বন্ধ থাকতে পারে। যাকে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া বলে।

২. শিশু ঘনঘন সর্দি-কাশিতে ভোগে। একবার সদি-কাশি হলে তা সহজে সারতে চায় না।

৩. সর্দি গলার পেছন থেকে ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে কানে চলে যায়। ফলে কানে ঘনঘন ব্যথা, কানে ইনফেকশন, কানের পর্দা ফেটে যাওয়া, কানের ভেতর পানি জমা, কানে কম শোনা বা গ্লুইয়ার সমস্যা হতে পারে।

৪. এডিনয়েডের কারণে ঘনঘন গলার ইনফেকশন, খুসখুসে কাশি, গলার স্বর বসে যাওয়া হতে পারে।

৫. শরীরের ভেতর অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য ঘুম ঘুম ভাব, পড়ালেখা ও স্কুলে অমনোযোগী হওয়া, বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। রাতে বিছানায় প্রস্রাবও করতে পারে।

এসব উপসর্গ দেখলে বুঝবেন শিশু এডিনয়েডের সমস্যায় ভুগছে।

চিকিৎসা 

শিশুদের এ সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এমন হলে বয়সভেদে এন্টি-হিস্টামিন, মন্টিলুকাস্ট, নাকের স্প্রে/ড্রপ এবং প্রয়োজনবোধে এন্টিবায়োটিক দিয়ে মেডিকেল চিকিৎসা করা হয়। সঙ্গে কানে শোনার পরীক্ষাও করে নিতে হয়। 

কখন অস্ত্রোপচার করাবেন
অনেক সময় শিশুর বয়স ১২-১৪ বছর হলেও এডিনয়েড স্বাভাবিক হয় না। ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় না হলে শিশুর কষ্ট দীর্ঘতর হলে বিভিন্ন পরীক্ষার পর সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অপারেশনের মাধ্যমে এডিনয়েড ফেলে দিতে হয়, যা একটি নিরাপদ সার্জারি ।

টনসিলেকটমির মতোই এডিনয়েডেকটমিও একই প্রকৃতির অপারেশন। এ অপারেশনে চিকিৎসক নাসাপথের পেছনে থাকা এডিনয়েডটি কেটে বাদ দিয়ে দেন। ঘনঘন এডিনয়েডের সমস্যায় চিকিৎসক এ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এডিনয়েড যেহেতু পরবর্তীকালে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, তাই এই অঙ্গ বাদ দিলে শিশুর কোনো সমস্যা হয় না।

মনে রাখবেন-
১. যদি নাক প্রায়ই বন্ধ থাকে এবং এক্স-রে করে তার প্রমাণ পাওয়া যায় তবেই অস্ত্রোপচার করাতে হবে 
২. এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার কারণে যদি মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হয় এবং মধ্যকর্ণে তরল পদার্থ জমে আটকে থাকে
৩. যদি বারবার মধ্যকর্ণের ইনফেকশন হয়
৪. ঘুমের মধ্যে যদি শিশুর দম বন্ধ (স্লিপ এপনিয়া) অবস্থা হয়

অস্ত্রোপচারের উপকারিতা
অস্ত্রোপচারের পর শিশু ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে, শিশুর নাক বন্ধ অবস্থার উন্নতি হয়। এ সময়ে শিশুকে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। 
অ্যালার্জি থাকলে অপারেশনের পর শিশুকে অ্যালার্জির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ দিতে হবে। অপারেশনের দুই-তিন দিনের মধ্যেই শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশু সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

অস্ত্রোপচার না করালে যে ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শিশুর নাক বন্ধ থাকার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ বিঘ্নিত হয়। ফলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কম হয়। এছাড়া শিশু ক্রমাগতভাবে কম শোনার কারণে ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ে, পড়াশোনায় খারাপ করে এবং শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়।

একপর্যায়ে শিশুর মধ্যকর্ণের ইনফেকশন জটিল হয়ে কানের পর্দা ফুটো করে দেয় এবং শিশু কানপাকা রোগের নিয়মিত রোগী হয়ে যায় অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

শিশু মুখ হা করে ঘুমায়। রাতে ঘুমের মধ্যে শব্দ হয় (নাক-ডাকা)। এ সমস্যা বেশিমাত্রায় হলে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে বা কিছু সময়ের জন্য দম বন্ধ থাকতে পারে (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া)।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম