
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৩ এএম
‘ক্রসফায়ারের ভয়’ দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ এএম

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
২০২৩ সালের ২ আগস্ট। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর চামেলীবাগের গ্রিন পিস অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে তৎকালীন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমার নেতৃত্বে ৭/৮ জন পুলিশ প্রবেশ করেন। ঘুমন্ত অবস্থায় ওই বাসা থেকে দেশের অন্যতম মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনিকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডির সদস্যরা। সেসময় জনির বিরুদ্ধে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আনে সিআইডি।
এখানেই শেষ
নয়, ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনিকে সিআইডি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
জুয়েল চাকমার নেতৃত্বে বেধড়ক মারধর করা হয়। আটকের ২৯ ঘণ্টা পর আদালতে সোপর্দ করা হয়
জনিকে। এরপর রিমান্ডের নামে জনির স্ত্রীকে তার স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সিআইডির
কর্মকর্তারা হাতিয়ে নেয় ৪ কোটি টাকা। টাকা পরিশোধ করতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে গাড়ি, ফ্ল্যাট
ও জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১৫
এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নিজেকে নির্দোষ
দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ‘মেডিকো’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. মো. জোবায়দুর রহমান
জনি।
সংবাদ সম্মেলনে
পুলিশ কর্তৃক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক
ভিডিও ধারণ ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২ আগস্ট আমার ফ্ল্যাটে সাদা পোশাকে সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমার
সঙ্গে আরও ৭/৮ জন পুলিশ প্রবেশ করেন। এ সময় তারা আমার বাসার বিভিন্ন মালামাল লুণ্ঠন
করে এবং আমাকে তুলে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের সময় আমার স্ত্রী ও শিশু সন্তান ছিলেন ঘরেই।
আমি বলেছিলাম একটু সময় দেন, আমার স্ত্রী হিজাব পরবে কিন্তু কোনো কথা না শুনেই পুলিশ
জোর করে রুমে ঢুকে পড়ে। সিআইডির কর্মকর্তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য বেআইনিভাবে
বাসা থেকে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যায় আমাকে। তুলে নিয়ে যাওয়ার ২৯ ঘণ্টা
আমার পরিবারকে জানায়নি আমি কোথায় আছি।
ডা. মো. জোবায়দুর
রহমান জনি বলেন, সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে দুই চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটানোর
ছবি আমার স্ত্রী ও পরিবারকে পাঠানো হয়। যা তৎকালীন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার
নির্দেশে করা হয় এবং পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয় অন্যথায় ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া
হয়। পরবর্তীতে আমার পরিবার গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে সিআইডির এসআই মেহেদি হাসানের
গাড়িচালক সবুজের কাছে দফায় দফায় ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় এবং এসআই আতিকুর রহমান টাকা
দেওয়ার স্থান ও সময় জানিয়ে তদারকি করত।
তিনি আরও বলেন,
রিমান্ড চলাকালীন পুলিশি নির্যাতনে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কারাবাসের সময় ৪৩দিন কারা হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে
হয়েছে, ঠিকভাবে হাঁটতে পারতাম না। রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, কারাগারে থাকা অবস্থায় এবং
পরে কারামুক্তির এক পর্যায়ে সিআইডির পুলিশ কর্মকর্তারা আরও মামলার ভয় দেখিয়ে ও তার
স্ত্রীকে মানিলন্ডারিংয়ে মামলায় সম্পৃক্ত করার ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে ২০২৩ সালের
১৪ আগস্ট ৫০ লাখ টাকা, ১৬ আগস্ট ১ কোটি টাকা, ২৩ আগস্ট ৮০ লাখ টাকা, ২৮ আগস্ট ৭০ লাখ
টাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ৫০ লাখ এবং ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ৪ কোটি টাকা
গ্রহণ করে। সিআইডির কর্মকর্তাদের অবৈধ দাবি মেটাতে ব্যক্তিগত গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি
করতে হয়েছে। টাকা নেওয়া সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
ফ্রিজ রাখা হয়েছে ৬ মাসের বেশি।
মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ভুল তথ্যে আমাকে বাসা থেকে তুলে
নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের আগে সিআইডি আমাকে বলে- ২০০৬ সাল থেকে মেডিকো ফুলে ফেঁপে
উঠেছে, অথচ মেডিকো শুরু হয় ২০১১-১২ সাল থেকে। আমার পরিবারকে ভয় দেখানোর জন্য অস্ত্রসহ
অভিযানের নাটক করেছিল সিআইডি।
টাকা লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্কাই সিটি হোটেল ও আগারগাঁওয়ের রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই আপনারা বুঝবেন। এছাড়া ছয় দফায় যে চার কোটি টাকা দেওয়া হয় তার রেকর্ডও রয়েছে।
ডা. জোবায়দুর
রহমান বলেন, জীবনের ঝুঁকি বিবেচনায় এতদিন অভিযুক্ত সিআইডির সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা
করতে পারিনি। ১৫ এপ্রিল আদালতে বিভিন্ন অভিযোগে সিআইডির তৎকালীন কর্মকর্তা বর্তমানে
র্যাব-১৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা, সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া,
তৎকালীন সিআইডিতে কর্মরত বর্তমানে বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদি
হাসান এবং সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমানসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
করেছি।