
প্রিন্ট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০০ পিএম

ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম

আরও পড়ুন
দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলা, চলমান অমানবিক গণহত্যার প্রতিবাদ ও মসজিদুল আকসা পুণরুদ্ধারের দাবিতে রাজধানীর ডেমরায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থরা। সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন হাতে প্রতিবাদী স্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেন। জনতার আয়োজনে এদিন তারা পৃথকভাবে ডেমরার প্রধান ও অভ্যন্তরীণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শান্তিপূর্ণ মিছিলসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ইসরাইলের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার অঙ্গীকারও করেন বিক্ষুব্ধরা। তাদের এই গণজাগরণে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরাও সংহতি প্রকাশ করেন।
এদিন বিকালে শিক্ষার্থীরা ‘গাজা জ্বলছে, বিশ্ব চুপ কেন?’, ‘ফিলিস্তিনের শিশুরা, রক্ষা পাক’, ‘ইসরাইলি বর্বরতা, বন্ধ কর’সহ সংশ্লিস্ট নানা স্লোগানের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘গাজা ইজ ব্লিডিং’, ‘স্টপ কিলিং ইনোসেন্ট পিপল’, ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’সহ নানা প্রতিবাদী স্লোগান শোনা যায়। তারা ডেমরার প্রধান ও অভ্যন্তরীণ সড়ক ও মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে প্রতিবাদ জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা শুধু ইসরাইলের নৃশংসতার বিরুদ্ধেই নয়, বরং বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতারও প্রতিবাদ করে। পাশাপাশি ইসরাইলি পণ্য বর্জন কর, গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াও- এমন বার্তাও তারা তুলে ধরেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে এ পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। ইসরাইলের অবরোধ ও বিমান হামলায় গাজার ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আবির বলেন, ফিলিস্তিনের শিশুদের হাড় ও মাংস খুলে পড়ে যাচ্ছে, মাথা উড়ে যাচ্ছে এসব দেখে আর বসে থাকা যায় না।
আরেকজন শিক্ষার্থী মো.আদিল জানায়, আমরা ছোট, কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস রাখি। এই যুদ্ধ নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে, তাই আমরা এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক শাকিল হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য কোনো নির্দেশনা দিইনি। শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগ ও বিবেকের তাগিদে এতে অংশ নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এক মানবিক দায়িত্ব এমন ভাবনা থেকেই শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই মানবিকতা ও সচেতনতা আমাদের আশাবাদী করে তোলে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রসঙ্গে মোসা. জহুরা নামের এক অভিভাবক বলেন, আজকের শিশুরা শুধু বইয়ের জ্ঞান অর্জনেই সীমাবদ্ধ নেই, তারা সমাজে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেও সরব হচ্ছে, প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এটা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য এক আশার আলো। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানবিকতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস গড়ে উঠছে, তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। এ ধরনের উদ্যোগ তাদেরকে শুধু একজন ভালো শিক্ষার্থী নয়, বরং একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ডেমরা থানা পুলিশ বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত ছিল এবং পুরো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।
ঘটনাপ্রবাহ: হামাস ইসরাইল যুদ্ধ
আরও পড়ুন