
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০১ এএম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67ef11f97a370.jpg)
আরও পড়ুন
ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা। তবে তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। এ নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার বরিশাল ও রাজশাহীর কাউন্টারগুলোতে টিকিটের জন্য আসা যাত্রীরা অভিযোগ করেন, বাস মালিকরা সিন্ডিকেট করে টিকিট সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। যদিও মালিকরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় হানিফ পরিবহণের চারটি বাসে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, নির্দিষ্ট কয়েকটি পরিবহণ ছাড়া সব যানবাহনে টিকিটের দাম দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে দূর-দূরান্তে ১০টি রুটে পরিবহণ চলাচল করে। ঢাকা-বরিশাল রুটে সাকুরা ও হানিফ পরিবহণে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। বাকি নয়টি রুটে দ্বিগুণ বাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বরিশালে ঈদ পালন করতে আসা সোনিয়া আক্তার বলেন, সবসময় বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম যেতে বাস ভাড়া নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে নথুল্লাবাদ টার্মিনালে এসে অনেক কষ্টে একটি টিকিট পেয়েছি, তবে দুই হাজার টাকা নিয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির কয়েকটি বাসের ভাড়া না বাড়ালেও মিলছে না টিকিট। লোকাল পরিবহণে টিকিট পাওয়া যায়, তবে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। একই কথা জানান, জেলার উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রহমান জোমাদ্দার। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়া আসা করি পাঁচশ টাকায়। আজ বেপারি পরিবহণে এক হাজার টাকায় একটি সিট নিয়েছি। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট করে পরিবহণ মালিকরা দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন। বরিশাল নগরীর বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে রাজশাহী থেকে ঈদের দিন বরিশাল এসেছিলাম। আসার সময় বাড়তি বাড়া লাগেনি। আজ যাওয়ার সময় বাসের টিকিট সংকটের কথা জানান কাউন্টারের স্টাফরা। পরে দালালের মাধ্যমে দ্বিগুণ টাকায় একটি টিকিট ম্যানেজ করতে হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে কেউ কোনো বাড়তি ভাড়া নেয়নি। তার পরও যদি কোনো বাস কাউন্টারের স্টাফ বা বাসের স্টাফ বাড়তি ভাড়া নিয়ে থাকে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এছাড়া ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাসগুলো কয়েকগুণ বাড়তি টাকা আদায় করছে। সবসময় যেখানে পাঁচ হাজার টাকায় একটি গাড়ি সারাদিনের জন্য ভাড়া পাওয়া যেত, সেখানে এখন নিচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। মাইক্রো ড্রাইভাররা বলছেন, চাহিদার থেকে গাড়ি কম থাকায় বাড়তি ভাড়া ছাড়া মিলছে না ভাড়ার গাড়ি। এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির সিকদার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। কারও কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ঈদ-পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে হানিফ পরিবহণের চারটি বাসে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের শিবপুরের পাশে এ অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিন। তিনি জানান, রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে চলাচলে নন-এসি কোচের যাত্রীপ্রতি সরকারিভাবে নির্ধারিত ভাড়া ৬৯০ টাকা। কিন্তু হানিফ পরিবহণের রাজশাহী কাউন্টার থেকে বিক্রি করা টিকিটে ৮২০ টাকা লিখে আদায় করা হয়েছে ৯০০ টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে হানিফ পরিবহণের চারটি বাসে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রাজশাহী বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে বিভিন্ন গন্তব্যে টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে গ্রামীণ ট্রাভেলসে জরিমানা করা হয়েছিল। এছাড়া ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচলকারী দেশ ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহণ, ন্যাশনাল ট্রাভেলসসহ আরও কয়েকটি পরিবহণ কোম্পানিকে সতর্ক করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু তারা আমলে না নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, ঈদুল ফিতরে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে চলাচলের লক্ষ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে অভিযান চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিজিলেন্স টিম সিলেট বিআরটিএ, পুলিশ, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বাসমালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে অভিযান চলে। এ সময় জালালাবাদ পরিবহণে দুই হাজার টাকা ও ইমন পরিবহণে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।