
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৭ এএম

হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম

আরও পড়ুন
রাজধানীর আজিমপুরে শতাব্দীর প্রাচীন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় ঈদুল ফিতরের সকালটা ছিল অন্যদিনের চেয়ে কিছুটা আলাদা। ভোরে ফজরের নামাজের পর শিশুরা ঈদের সেমাই খেয়ে নতুন জামা পরে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
তবে উৎসবের এই মুহূর্তেও তাদের চোখে ছিল একরাশ বিষণ্ণতা—কারণ তাদের বাবা-মা নেই, নেই পরিবারের স্নেহময় ছায়া। নতুন পোশাক, ভালো খাবার পেলেও তাদের মন ভরে না।
এতিমখানার হিসাবরক্ষক আল-আমিন শাওন যুগান্তরকে জানান, ঈদের দিন সকালে ভুনা খিচুড়ি, ডিম ভুনা, সেমাই ও নুডলস এবং দুপুরে গরুর মাংস, পোলাও ও মিষ্টান্নের ব্যবস্থা করা হয়। তিন বেলা ভালো খাবার পেলেও এই শিশুদের আনন্দ সীমিত থাকে শুধু খাবার পর্যন্তই। কারণ ঈদ মানেই তো পরিবার, আর সেটাই তাদের নেই।
তিনি আরও জানান, এতিমখানার ৮৫ জন ছেলে ও ৯৫ জন মেয়ের মধ্যে ছুটির কারণে বর্তমানে ১৮ জন মেয়ে ও সাতজন ছেলে এতিমখানায় রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে।
এতিমখানায় বেড়ে ওঠা লাকি, মৌমিতা ও নুসরাত এসএসসি পরীক্ষার্থী। লাকি বলছিল, ঈদ এলে মনটা বেশি খারাপ হয়ে যায়। ঈদে আত্মীয়-স্বজনরা কেউ দেখা করতে আসে না। অন্যদের হাসিখুশি ঈদ দেখে খুব খারাপ লাগে।
আরেক এতিম শিশু মরিয়ম যুগান্তরকে জানায়, মা নেই বলেই ঈদ এলেই মন খারাপ হয়ে যায়। বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। কান্না চেপে রাখতে পারি না— বলতে বলতে তার চোখ ছলছল করে ওঠে।
মাত্র আট বছরের মোবাস্বিরা এতিমখানায় থাকছে এক বছর ধরে। বাবার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে। বলে, বাবা আমাকে মা বলে ডাকত, ওটাই বেশি মনে পড়ে। বলতে গিয়ে আর কথা বলতে পারে না।
বালক শাখার হাবিবুর রহমান, রেদোয়ান ও ইয়াসিন আরাফাত মানিক জানায়, ঈদের দিনটা আসলে তাদের কাছে অন্য দিনের মতোই। পরিবার ছাড়া ঈদের আনন্দ হয় না!
ইয়াসিন জানায়, আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, মাসে এক-দুইবার দেখতে আসেন। কিন্তু ঈদে কেউ নিতে আসে না।
এতিমখানার এক কর্মচারী জানান, অনেক এতিম শিশু এখানে থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছেন। অনেকে বিদেশেও উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। ঈদে কিছু শিশু স্বজনদের কাছে যায়, তবে যারা এখানেই থাকে, তাদের জন্য নতুন পোশাক ও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করি। কিন্তু বাবা-মা না থাকার কষ্ট তো আর পূরণ করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা কাঁদলে তাদের সান্ত্বনা দিই। ওদের নিজের সন্তানের মতো দেখি। কিন্তু পরিবার ছাড়া ঈদের আনন্দ কখনোই পূর্ণ হয় না।
এভাবেই কাটে এতিম শিশুদের ঈদ—নতুন পোশাক, ভালো খাবার থাকলেও তাদের হৃদয়ে থাকে এক অমোচনীয় শূন্যতা।