রাজউকের ফরমায়েশি প্রকল্প
আবদুল হামিদের জন্য যেভাবে পালটে দেওয়া হয় নিকুঞ্জের চেহারা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:৪০ এএম

বঙ্গভবনে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা নিকুঞ্জের নিকুঞ্জের বাড়িতে ওঠেন হাসিনা সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।তবে এর আগেই নিকুঞ্জের চেহারা পুরোপুরি পালটে দেওয়া হয়।
সাবেক রাষ্ট্রপতিকে খুশি করতে রীতিমতো ঢেলে সাজানো হয় চারপাশ। ফুলবাগান, ওয়াকিং ওয়ে ছাড়াও নির্মাণ করা হয় পরিপাটি রাস্তা। পরিত্যক্ত নিকুঞ্জ খাল হয়ে ওঠে পদ্মফোটা দৃষ্টিনন্দন লেক।
রাজউক সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সুখবিলাসের জন্য ওই এলাকা ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো হয়।তিনি বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জে ওঠার আগেই বিশেষ করে তার বাড়ির সামনের খাল সংস্কারে দুহাতে টাকা ঢালে সরকার। এমনকি প্রকল্পের অংশ না হলেও পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়।
রাজউকের তত্ত্ববাধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এতে ২৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করা হয়।
যেভাবে গচ্চা গেল ২৪ কোটি: লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে হামিদের তিনতলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি। কর্নার প্লট হওয়ায় বাড়ির দুইদিক ফাঁকা। সামনের অংশে প্রবহমান খাল। দুপাশে হাঁটার (ওয়াকওয়ে) বাঁধানো রাস্তা। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ। দেশি-বিদেশি ফুল ও শৌখিন পাতাবাহারে সজ্জিত চারপাশ।
এমনকি খালের পানিতেও ভাসছে পদ্মফুল। সারি সারি খেজুরগাছ লেকের পাড়ঘেঁষে। গাছের খাঁজে খাঁজে নিয়মিত রস সংগ্রহের চিহ্ন। খালসংলগ্ন রাস্তা আলোকিত করতেও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কিছুদূর পরপর বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাম্প পোস্ট।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং পূর্বাচল লিংক রোডের ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) এমএম এহসান জামীল যুগান্তরকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সুবিধার জন্য নিকুঞ্জ খাল সংস্কার করা হয়েছে, এমনটি বলা যাবে না। খালটি পরিত্যক্ত থাকায় আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিয়মিত জলাবদ্ধতা দেখা দিত। এ সমস্যা নিরসনে নিকুঞ্জ খালের সঙ্গে স্থানীয় আরও কয়েকটি খাল সংস্কার করা হয়।
রাজউক সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কোটায় নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন আবদুল হামিদ। সে অনুযায়ী ৯৭ সালের ৫ অক্টোবর তাকে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি নকশা অনুমোদন নেন। সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি হিসাবে বঙ্গভবনে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে আবদুল হামিদ সপরিবারে নিকুঞ্জের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরপর এলাকাটি রীতিমতো নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া সাধারণের প্রবেশে ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তবে পট পরিবর্তনের পর আবদুল হামিদ পালিয়ে গেলে আলোচিত বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
সোমবার দুপুরে সেখানে গেলে দেখা যায় বাড়ির প্রধান ফটক ভেতর থেকে বন্ধ। ভেতরে তেমন কারও সাড়াশব্দ নেই। একপর্যায়ে দরজায় টোকা দিলে মাহমুদ নামের একজন পুলিশ সদস্য বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, বাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারের কেউ নেই। তবে লুটপাটের শঙ্কা থেকে ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) পক্ষ থেকে ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়মিত পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন দেশের দূরদূরান্ত থেকে উৎসুক জনতা একনজর হামিদের বাড়িটি দেখতে আসছেন। তাদের কেউ ছবি তুলছেন। কেউবা বাড়িসহ আশপাশের এলাকার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করছেন।