নারী দিবসে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৪ দাবি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম

সংগৃহীত ছবি
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ১৪টি দাবি জানিয়েছে ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৬৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এসব দাবি তুলে ধরেন কর্মজীবী নারী সংগঠনের প্রতিনিধি কাজী গুলশান আরা দীপা।
তিনি বলেন, ‘সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে দেশের সব আইন সংবিধানের আলোকে ইউরোপীয় নাগরিক আইনের আদলে প্রণীত হয়েছে। একমাত্র ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আইন, যা নারীর অধিকার খর্ব করে তা ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রণীত। একই দেশে এ ধরনের দ্বৈত ব্যবস্থা স্পষ্টতই অসাংবিধানিক। অন্যদিকে নারীবিরোধী মৌলবাদীগোষ্ঠী একটি মহল প্রতিনিয়ত নানা অযৌক্তিক, অসাংবিধানিক দাবি তুলে নারীর অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করে সমাজে এক ধরনের ঘৃণা ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখিনি আমরা।’
কাজী গুলশান আরা দীপা বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে নারীসহ সবাইকে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীদের শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকরি বা গার্মেন্টসে সস্তা শ্রমের জোদানদাতা হিসেবে রেখে দিলে অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে না। নারীর ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব হবে যখন কোনও সীমাবদ্ধতা ছাড়াই নারীরা শিক্ষা, কর্মজীবন ও নিজেদের জীবন ধারায় পরিবর্তন আনার জন্য সমান সুযোগ ও মর্যাদা পাবে।’
নারী অধিকার কর্মীদের একজন খুশি কবির দেশের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিক্ষোভের পরও অনেক হয়রানিকারী এবং ধর্ষককে জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা নারীর স্বাধীনতার জন্য পরিবেশকে আরও জটিল ও বিপজ্জনক করে তুলেছে। আমরা এমন সমাজ চাই না।’
অধিকার আদায়ে নারীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৪ দফা দাবি হলো–
১. বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা।
২. সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সম-অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।
৩. নারীর অবৈতনিক পারিবারিক কাজের স্বীকৃতি দিয়ে তা জিডিপিতে অর্ন্তভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া।
৪. জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা এবং সংরক্ষিত আসন সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ বাড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণ করা।
৫. নীতি নির্ধারণীর সব পর্যায়ে নারীর সম-অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা।
৬. গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯০ নম্বর অনুচ্ছেদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।
৭. নারী গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিষয়টিকে শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা।
৮. উত্ত্যক্তকরণ ও যৌননিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাস্তবায়ন ও রায়ের আলোকে আইন প্রণয়ন করা।
৯. পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এর বাস্তবায়ন করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নারীকে অবমাননা করে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ বা প্রচার করা হয় তা নিয়ন্ত্রণ করা।
১০. অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা, অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
১১. সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
১২. জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১) (গ) এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা।
১৩. বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭-এর মেয়ের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত বিশেষ বিধান বাতিল করে আইনের বাস্তবায়ন করা।
১৪. প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করা।