‘কবজি কাটা’ আনোয়ার গ্রেফতার
মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আতঙ্ক কিশোর গ্যাং-প্রধান ‘কবজি কাটা’ আনোয়ারকে গ্রেফতারের পর এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে তার অনুসারীরা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তারা দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে। ৮-১০টি বাড়ি ও দোকানে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। তাদের সহিংসতা দেখে ফেলায় পুলিশকে ধাওয়া ও বিট অফিসে হামলা করেছে তারা।
মঙ্গলবার আদাবরের শ্যামলী হাউজিং ও শেখেরটেক হাউজিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সোমবার দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় একের পর এক হামলার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পুলিশ বলছে, কবজি কাটা আনোয়ারের বাহিনীর সদস্যদের ধরতে মাঠে নিয়মিত অভিযান
চালাচ্ছে পুলিশ ও র্যাব। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পর বিশেষ
ব্লকরেড দিয়ে চক্রের সব অপরাধীকে গ্রেফতার করা হবে।
স্থানীয়রা
জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রকাশ্যে আদাবরের শ্যামলী হাউজিং এলাকায় দেশীয় ধারালো
অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়া দেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদ্যরা। তাদের মধ্যে ছিল চক্রের অন্যতম মূলহোতা
হাড্ডি শুক্কুর, টুন্ডা বাবু ও মুন্না। এ সময় তারা ৮ থেকে ১০টি দোকান ও বাসাবাড়িতে
হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বন্ধ দোকানের শার্টার ও বাসার গেটে কোপ দেয়। আদাবর
থানার শ্যামলী হাউজিং এলাকার ৪ নম্বর বিট অফিসে ছিলেন এসআই মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন পুলিশ
সদস্য। হামলার ঘটনা দেখে ফেলায় তাদেরও ধাওয়া করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। বিট অফিসেও
হামলা করে তারা।
তারা আরও
জানান, মঙ্গলবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে কিশোর
গ্যাং সদস্যরা। সোমবার রাত ৯টায় শেখেরটেক ৯ নম্বর রোডে দাদার গ্যারেজের সামনে বিজয়
নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনার পর ছোট ভাইয়ের জন্য ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে
গেলে তারই বড় ভাই রাসেলকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে আদাবর ১০ নম্বর
রোডের কিশোর গ্যাংচক্রের অন্যতম মূলহোতা শাহ আলম ও নাজমার ছেলে রানা। তাদের নেতৃত্বে
বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ নেয়। তারা সবাই কবজি কাটা আনোয়ার বাহিনী ও টুন্ডা বাবু গ্রুপের
সদস্য।
হামলায়
আহত রাসেল বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টায় আমার ছোট ভাইয়ের মোবাইল থেকে একজন কল করে আমাকে
কোপানোর খবর জানায়। তার অসে্ত্রাপচারের জন্য ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে যাওয়ার সময় শেখেরটেক
৭ নম্বর রোডে আমাকেও কুপিয়ে আহত করে তারা। লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে
যায়। ভাইকে কোপানোর ঘটনায় থানায় যেন মামলা না করি, সেজন্য ভয় দেখাতে আমাকেও কুপিয়েছে।
শ্যামলী
হাউজিং ২য় প্রকল্পের বাসিন্দা আনিস মিয়া বলেন, মঙ্গলবার সকালে দেখি, বেড়িবাঁধ দিয়ে
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিচে নামছে আর দোকানপাটে
কোপাচ্ছে। এ সময় পাশে বিট অফিস থেকে পুলিশ বের হলে কিশোর গ্যাংচক্রের সদস্যরা তাদেরও
ধাওয়া দেয়। পুলিশ সদস্যরা কোনোরকমে পালিয়ে যেতে পারলেও বিট অফিসে হামলা চালায় কিশোর
গ্যাং। এছাড়াও এলাকার অনেক দোকান ও বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে তারা।
এ বিষয়ে
তেজগঁাও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন,
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে তারা বিভিন্ন এলাকা
থেকে হঠাত্ এসে হামলা করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। শিগগিরই চক্রগুলো নির্মূলে জোরালো
অভিযান শুরু হবে।
র্যাব-২-এর
অধিনায়ক খালিদুল হক হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের শনাক্তের
কাজ চলছে। চক্রের সবাইকে ধরতে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।
তেজগাঁও
বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টের মাধ্যমে সব ধরনের
অপরাধীকে ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে। ২১ ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে কিশোর গ্যাংসহ
অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ ব্লকরেড চালানো হবে।