Logo
Logo
×

রাজধানী

শবেবরাতে আজিমপুর কবরস্থানে ভিড়, অশ্রুসিক্ত স্বজনরা

Icon

মো. জহিরুল ইসলাম, হাজারীবাগ (ঢাকা)

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২২ এএম

শবেবরাতে আজিমপুর কবরস্থানে ভিড়, অশ্রুসিক্ত স্বজনরা

গভীর রাতে আজিমপুর কবরস্থানে অশ্রুসিক্ত স্বজনরা। ছবি: যুগান্তর

পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষ্যে শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগি, জিকির, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলে মগ্ন ছিলেন। 

রাজধানীর বিভিন্ন কবরস্থানে স্বজনদের কবর জিয়ারতে মানুষের ঢল নামে, বিশেষ করে আজিমপুর কবরস্থানে গভীর রাত পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আজিমপুর কবরস্থানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষ স্বজনদের কবর জিয়ারত করছেন। রাত সাড়ে বারোটার দিকে কবরস্থানের তিনটি গেট দিয়ে মানুষের ঢল নামতে থাকে। 

এসময় দেখা গেছে, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কোরআন তেলাওয়াত করছেন, কেউ দোয়া ও মাগফেরাত কামনায় মুনাজাত করছেন। অনেককে আবার কবরের পাশে বসে অশ্রুসিক্ত হতেও দেখা গেছে। 

আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার মো. নুরুল হুদা জানান, শবে বরাতে কবর জিয়ারত বাধ্যতামূলক না হলেও এটি ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। মানুষ আপনজনদের কবর জিয়ারত করে, মাগফেরাত কামনা করে এবং পরকাল স্মরণ করে। দুপুর থেকে শুরু হওয়া ভিড় রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে, বিশেষত রাত ১১টা থেকে ফজর পর্যন্ত। হাজারো মানুষ কোরআন তেলাওয়াত ও মুনাজাতে অংশ নেন। শুধু ঢাকার নয়, দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন, আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করতে বা সকল মৃতের জন্য দোয়া করতে। শবে বরাতের রাতটি তাই আত্মিক ও ধর্মীয় মিলনমেলায় পরিণত হয়।

উর্দুরোড থেকে কবর জিয়ারতে আসা মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমার পরিবারের কেউ এখানে শায়িত নেই, তবু প্রতিবছর শবেবরাতে এখানে আসি। মৃতদের জন্য দোয়া করা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি।

কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, আমার বাবা মাত্র ২৫ দিন আগে মারা গেছেন। আজ তার জন্য দোয়া করতে এসেছি, পাশাপাশি হাজারো মৃত আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি।

ফার্মগেট থেকে আপন ছোট বোনের কবর জিয়ারতে আসা মো. উজ্জল বলেন, আমার বোন ক্যান্সারে মারা গেছে। আজকের এই দোয়া কবুলের রাতে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমার বোনকে জান্নাত দান করেন এবং তার গুনাহ মাফ করেন।

আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে কবর জিয়ারতে আসা মো. সাদেকুল আলম রয়েল বলেন, আমার মেয়ে কিছুদিন আগে মারা গেছে। আজ তার কবর জিয়ারত করতে এসেছি। এই কবরস্থানে এলে বোঝা যায়, মানুষ কতটা অসহায়। আজকের রাতে আমি আমার মেয়ের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করেছি।

এদিকে আজিমপুর কবরস্থানের বাইরে ফকির-মিসকিনদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অসহায় মানুষ শবে বরাতের দিনে সাহায্যের আশায় বসে থাকেন। অনেক মুসল্লি জিয়ারত শেষে তাদের মধ্যে খাবার ও টাকা বিতরণ করেন।

উত্তরার বাসিন্দা মো. জসিম বলেন, শবে বরাত শুধু দোয়ার রাত নয়, এটি দান-সদকার রাতও। আমরা জিয়ারতের পর দরিদ্রদের মধ্যে দান সদকা করেছি।

শবেবরাত উপলক্ষ্যে আজিমপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন কবরস্থানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম