Logo
Logo
×

রাজধানী

বাধা পেয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৯ পিএম

বাধা পেয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে যেতে বাধা পেয়ে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

আজ সন্ধ্যায় মিরপুর সড়ক ছেড়ে বিক্ষোভরত ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা করেন। সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছান তারা। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে ওই জায়গায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেন গণ-অভ্যুত্থানে আহতরা।

আহত আমিনুল ইসলাম ইমন বলেন, গতকাল রাত থেকে তারা সড়কে অবস্থান করলেও সরকারের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি তাদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, ন্যূনতম সহানুভূতিও দেখাননি। অথচ জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত মানুষদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে।

কোরবান শেখ নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা শিশুমেলা মোড় ছেড়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হচ্ছেন। তাদের মধ্যে আহত যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত, তারা সেই কাগজ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায় ও কেউ হুইলচেয়ারে করেই যমুনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

এর আগে আহতরা দিনভর শিশুমেলা মোড়ে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। দাবি না মানলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে শনিবার থেকে বিক্ষোভ করছেন তারা।

জানা যায়, আজ দুপুর সাড়ে ১১টায় শিশুমেলা সড়কের অবস্থান নিয়ে দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো শ্যামলী, মোহাম্মদপুর ও আগারগাঁও এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

আন্দোলনরত আহতরা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসন করা ও আহতদের সেবা দিতে যে চারটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে সেই ক্যাটাগরি বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানান। এছাড়াও অসুস্থদের দ্রুত সময়ের মধ্য উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি জানান তারা। তারা আরও জানান, সড়কের অবস্থান ছাড়লেও আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের দাবি না মানলে প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করা হবে।

এদিকে শ্যামলী এলাকাজুড়ে সোহরাওয়ার্দী, হৃদরোগ, মানসিক, পঙ্গু, চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও শিশু হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাাতল থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। এসব হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা যেসব রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্যান্য যানবাহনযোগে এসেছেন। সড়ক বন্ধ থাকায় তারাই সবচেয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে, সাপ্তাহিক প্রথম কর্ম দিবসে রাস্তা বন্ধ হওয়া দুর্ভোগে পড়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরীজীবীরা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দাবি, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা সঠিক চিকিৎসার অভাবে দিনের পর দিন অবহেলায় পড়ে আছে। অনেক আহত আছে যারা এখনো বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন তুলে চিকিৎসা করছে। অনেকে নিজের বিটে-মাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করে যাচ্ছে। কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। সুচিকিৎসা, পুর্নবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আন্দোলনরত মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা গত ৭ মাস ধরে সুচিকিৎসা, পুর্নবাসনসহ নানা দাবির জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে কী লাভ হলো। শেখ হাসিনার আমলের মতোই আমরা বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আমাদের অধিকার নিয়ে বর্তমান উপদেষ্টারা সোচ্চার না। গতকাল থেকে আমরা সড়কে অবস্থান করছি। অথচ এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আজকে বিকাল ৪টার মধ্যে যদি আমাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে। তাহলে আমরা বিকাল ৪টার পর সচিবালয় ঘেরাও করতে যাব।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় আহত হাসান জানান, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় আমি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও হাসপাতালে আমাদের চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে। চিকিৎসকরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় প্রতিটি ওয়ার্ডে মুখ দেখিয়ে আসে আর যায়। ঠিকমতো তারা কোনো চিকিৎসা দিচ্ছে না। আমাদের অনেকে আছে আহত হয়ে চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে পঙ্গু হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন করেছে। আবার কেউ কেউ বাড়ির ভিটে-মাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করাচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, আমাদের আহতদের সু-চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান এর দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। এই তিন দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না। আন্দোলনরত শাহীন জানান, আমি ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছি। তখন ঠিকমতো কোনো চিকিৎসা পাইনি। আমাকে ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিৎসা দিলে আমি পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হতো না। আমি পঙ্গু হয়ে সব কিছু হারালাম। অথচ এ নিয়ে সরকার কিংবা হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। সব কিছু আমরা বিসর্জন দিয়ে এখন আমরা মহাবিপদে। আমাদের দ্রুত তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হোক। এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

বগুড়ার শেরপুর থেকে সকালে গাবতলীতে এসে পৌঁছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সি গোলাম আজম। তিনি ঢাকা মেডিকেলে যাবেন। ঢাকায় এসে গাবতলী বাস থেকে নেমে বিপাকে পড়েছেন। তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলে আমার ভাতিজা চিকিৎসাধীন। তাকে দেখতে সকালে ঢাকায় এসেছি। রাস্তায় গাড়ি বন্ধ তাই কল্যাণপুর থেকে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছি। জানি না কতদূর হেঁটে যেতে হবে।

তার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে ভাঙ্গা পায়ের চিকিৎসা করাতে ঢাকা এসেছেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, একটা দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায়। গ্রামের চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় আমার পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আজকে পঙ্গু হাসপাতালে সকাল বেলা ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন সাভার যাওয়ার উদ্দেশে গাড়িতে উঠেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে ধরে গাড়ি থেমে আছে। এজন্য বাধ্য হয়ে কষ্ট করে হেঁটে রওনা দিয়েছি। দেখি কষ্ট করে কতদূর হেঁটে যাওয়া যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম