Logo
Logo
×

রাজধানী

সাবেক আ.লীগ এমপির দখলে ‘সাংবাদিক পল্লি’, বস্তি হিসেবে ভাড়া

মাহবুব আলম লাবলু

মাহবুব আলম লাবলু

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পিএম

সাবেক আ.লীগ এমপির দখলে ‘সাংবাদিক পল্লি’, বস্তি হিসেবে ভাড়া

প্রশাসনের নাকের ডগায় মিরপুরের পল্লবী আলেকদি ঝিলপাড় বস্তিতে চলছে অবৈধ মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা। সাংবাদিক আবাসনের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বস্তি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ-সদস্য ইলিয়াস মোল্লার নিয়ন্ত্রণে এখনো চলছে অবৈধ ব্যবসা। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলও এই বস্তি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার প্রায় ৩০০ সাংবাদিক পরিবারের জন্য ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতিকে রাজধানীর পল্লবীর ঝিলপাড় মসজিদের পাশে সাত একর জমি বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই এই বিশাল জমি জোর করে অবৈধভাবে দখলে নেয় ঢাকা-১৬ আসনের দলীয় সংসদ-সদস্য ইলিয়াস মোল্লা। এর একাংশে বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়। অন্য অংশে গড়ে তুলে গরুর খামার। ইলিয়াস মোল্লা নিজেই অবৈধভাবে গরুর খামার স্থাপন করেন।

সূত্র জানায়, বস্তি, দোকান ও অস্থায়ী মার্কেট করার পর সেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার পানির সংযোগের ব্যবস্থা করেন ইলিয়াস মোল্লা। আত্মগোপনে থাকা ইলিয়াস মোল্লা এখনো নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিমাসে ভাড়া তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদকের ব্যবসাও থেমে নেই।

জানা যায়, ইলিয়াস মোল্লার বোনের ছেলে সালমান মোল্লা অবৈধভাবে ওই জায়গায় বস্তি ও দোকান ঘর স্থাপন করে ভোগদখল করে আসছেন। সালমান মোল্লা শুধু বিদ্যুৎ বিল বাবদ বস্তিবাসীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৪ লাখ টাকা এবং বস্তির পূর্বপাশে অবৈধ স্থাপনা থেকে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করেন বলে অভিযোগে জানা যায়।

জানা যায়, ইলিয়াস মোল্লার ছোট ভাই আলি মোল্লার বডিগার্ড চিকন হারিসের নেতৃত্বে সাব্বির, গাজী ওই জমির পশ্চিমপাশের গড়া স্থাপনা থেকে বস্তি ও দোকানঘর ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে তিন থেকে চার লাখ টাকা চাঁদা তোলেন। আলোকদি এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসী সামছু তার সহযোগী সোহেল, ফারুক, আনোয়ার ও তাদের সহযোগীরা বস্তি এলাকায় ইয়াবা, গাঁজাসহ মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছেন। এ গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন সামছু।

ঝিলপাড় নতুন রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করেন সালমান মোল্লার ড্রাইভার ফজলু। মন্দির থেকে মোড় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করেন আলী মোল্লার অফিসের স্টাফ বেলাল ও মাসুদ। জসিম মোল্লার হয়ে বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেন তুফান। ইলিয়াস মোল্লার ভাগিনা সালমান মোল্লার হয়ে টাকা তোলেন ড্রাইভার ফজলু। ইলিয়াস মোল্লার চাচাতো ভাই জসিম মোল্লার পক্ষে টাকা তুলেন তুফান। এমপি ইলিয়াস মোল্লার ছোট ভাই আলী মোল্লার হয়ে টাকা ওঠান বিল্লাল। এর অদূরেই ইলিয়াস মোল্লার বাড়ি গিয়ে ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার বস্তিতে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে ৫ আগস্ট বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজত থেকে লুট হওয়া কিছু অস্ত্র এখানে থাকতে পারে। মিরপুর এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ডে এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। 

ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতির সভাপতি সদরুল হাসান বলেছেন, দখলমুক্ত করতে বহুবার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছি। একপর্যায়ে কিছু অংশ বুঝিয়ে দিলে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করি। কিছুদিন পরই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা লোক পাঠিয়ে ভেঙে দেন। গত ২৮ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছি। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলেও পুলিশ উচ্ছেদ করতে পারছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। 

স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনি এলাকায় বিগত ১৬ বছর ইলিয়াস মোল্লার কথাই ছিল আইন। জমি ছাড়াও বহু দোকান, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখলে নিয়েছেন। এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে বাড়ির বৈঠকখানায় সালিশ বসিয়ে আদালতের আদলে বিচার করতেন। বিচার না মানলে নিজে মারধর করতেন। মামলা দিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দিতেন। বিচারের রায় পক্ষে দেওয়ার জন্য সহকারীদের মাধ্যমে ঘুসও নিতেন ইলিয়াস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডার পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনে অতর্কিত হামলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম