খিলক্ষেতে রেলের জলাশয় ভরাট করে পার্কের সাইনবোর্ড
ভাটারা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ এএম
ফাইল ছবি
রাজধানীর খিলক্ষেতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জলাধার ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে পার্ক। প্রায় চার বছর আগে এ জলাশয়ের ওপর পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের চষ্টো করেছিল মিলেনিয়াম হোল্ডিং কোম্পানি। জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় প্রতিবাদে নামেন স্থানীয়রা। উচ্চ আদালতে রিট করেন। পরবর্তীকালে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত জলাধার ভরাট করে পাঁচতারকা হোটেল ও শপিং কমপে্লক্স নির্মাণ কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আদালত স্থিতাবস্থা জারির ফলে দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে কাজ। স্থিতাবস্থা জারি থাকলেও গত নভেম্বর থেকে জায়গাটিতে আবারও ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। হোটেলের সাইনবোর্ড উঠে এবার বসেছে নতুন সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা ‘খিলক্ষেত ইডেন পার্ক, বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধানে খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।'
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের
গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তিতে
১৫ দিন ধরে মাটি ভরাট চললেও জানে না রেলওয়ে বা সিটি করপোরেশন। সরেজমিন দেখা গেছে,
ভরাটের কারণে বিলুপ্ত ওই ‘জলাধারের’
দুই দিকে কুড়িল ফ্লাইওভার। একদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। জমি লাগোয়া ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের
সংযোগস্থল। ঢাকা থেকে সারা দেশের রেলসংযোগ চলে গেছে জমিটি ঘেঁষে। ইতোমধ্যে ১ দশমিক
৮৪ একর জায়গার পুরোটাই ভরাট করা হয়ে গেছে। এখন চলছে সমান করার কাজ। বিজয় দিবস ২০২৪
উপলক্ষ্যে জায়গাটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যানার লাগানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন
পর ২৩ নভেম্বর থেকে ফের জায়গাটি ভরাট শুরু হয়। কিছুদিন আগে এক গ্রুপ এসে মিলেনিয়াম
হোল্ডিং কোম্পানির নির্মাণাধীন সাইট অফিসে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড (আংশিক) ছাত্রদলের ব্যানার
লাগিয়ে যায়। এলাকাবাসীর নামে পার্কের সাইনবোর্ড বসিয়ে দেওয়া হয় আরেকদিকে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের
(ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ওখানে
পার্ক নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তবে রেল জায়গা হস্তান্তর করেনি। তাই পার্কের বিষয়টি
জানা নেই। রেলের জায়গা, রেলই বলতে পারবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত
মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কারা পার্ক
নির্মাণ করছে জানা নেই। কাউকে পার্ক নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ অনুমতির জন্য
আবেদনও করেনি। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের বিভিন্ন প্রানে্ত থাকা রেলওয়ের জমি থেকে
অবৈধ দখল নিজ নিজ উদ্যোগে সরাতে ৫ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে সংশি্লষ্ট বিভাগকে
আইনানুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।
খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটির
সভাপতি ও খিলক্ষেত থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক
সহসভাপতি শাহনুর আলম যুগান্তরকে বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণে জমি অধিগ্রহণ করলে আমরা
তাকে সাধুবাদ জানাব। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত পঁাচতারকা হোটেল নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ
আমরা মানব না। আগে এখানে পঁাচতারকা হোটেল নির্মাণে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করলে বর্ষার
পানিতে আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে যায়। তখন আমরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে এ কাজে বাধা দিই।
স্থানীয় অধিবাসীদের চাহিদা মোতাবেক এখন আমরা এখানে একটি পার্ক নির্মাণের চষ্টো করছি।
পার্কটি জনসাধারণের উপকারের জন্য নিজেরা টাকা তুলে চারদিকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা
রেখে নির্মাণ করছি।
পার্ক নির্মাণ নিয়ে ২ ডিসেম্বর
রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়েছে মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল। অনুলিপি পাঠিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদষ্টো, সচিবসহ সংশি্লষ্ট
বিভিন্ন দপ্তরে। তিনি অভিযোগ করেছেন, জায়গাটি হোটেল প্রকল্পের জন্য রেলওয়ে থেকে তাদের
লিজ নেওয়া। ২৩ নভেম্বর রাতে স্থানীয় বিএনপির খিলক্ষেত থানার নেতা শাহিনুর আলম মারফত,
মো. ফজলুল হক, সোহরাব খান স্বপনসহ কমপক্ষে ৩০ জন ওই জায়গায় গিয়ে তাদের প্রকল্পের
ও আদালতের স্থিতাবস্থার সাইনবোর্ড তুলে ফেলে। পার্কের নামে মাটি ভরাট শুরু করে। বিষয়টি
খিলক্ষেত থানায় জানালে পুলিশ তাত্ক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করলেও
পরে তারা আবার শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব
মো. ইমরান যুগান্তরকে বলেন, আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশে হোটেল নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছি।
এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে স্থানীয় একটা শ্রেণি জায়গাটি দখলের চেষ্টা করছে। আমরা
আইনিভাবে এগোচ্ছি। আশা করি খুব দ্রুত এর সমাধান হবে।