পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র: দোকানঘরে স্বাস্থ্যসেবা, অস্বস্তিতে নারীরা
মো. মাহবুবুর রহমান ভূইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ফাইল ছবি
রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি যেন একটি ভূতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। নজরদারি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই এখানে মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা। ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও মুগদা থানাধীন ডিএসসিসির ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এটি। অযত্ন-অবহেলায় বিগত ৬ বছরে ক্রমেই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে ছোট একটি দোকানঘরে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সীমিত জায়গার কারণে সেবা প্রদান বেশ জটিল হয়ে পড়েছে যা রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মী উভয়ের জন্য অস্বস্তিকর।
তবে এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মীরা আজও নিরলসভাবে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন যাযাবরের মতো এদিক-সেদিকে। কখনো চেয়ারম্যান কার্যালয়ে, কখনো ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে, কখনোও বা রাস্তার পাশে কারও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বা দোকান ঘরে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে বিতারিত হয়ে বর্তমানে সেবা কার্যক্রম চলছে ভবন সংলগ্ন রাস্তার পাশে একটি দোকান ঘরে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেবা গ্রহীতারা। রাস্তার পাশে জনগণের সামনে পরিবারকল্যাণ বিষয়ক সেবা নিতে অস্বস্তিতে পড়ছেন মহিলারা। ভবনটির পুনর্নির্মাণের বিষয়টি বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় লাখো মানুষের সরকারি চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাবেক তেজগাঁও থানার অধীনে থাকাকালীন ডেমরার পূর্ব ডগাইর এলাকায় ১৯৭৭ সালের ১৪ অক্টোবর স্থাপিত হয় মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি। বর্তমানে এখানে ১ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ২ জন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন আয়া, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন অফিস সহায়ক (এফপিআই) ও ১ জন পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শক (ফিল্ড ইন্সপেক্টর)সহ ৭ জন স্বাস্থ্য কর্মী সারাক্ষণ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। এছাড়াও বাকি কার্যক্রমের জন্য এখানে ১৬ জন পরিবারকল্যাণ সহকারী (ফিল্ড ওয়ার্কার) রয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পাশের প্রধান ও শাখা সড়ক উন্নয়নের ফলে অনেক উঁচু হয়ে যাওয়ায় এখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নোংরা পরিবেশে পানির নিচে তলিয়ে আছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘাস-গুল্মলতা জন্মে জঙ্গলে রূপান্তরিত হয়ে এক ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নির্মিত হয়েছে ডিএসসিসির ময়লা রাখার ডাম্পিং স্টেশন।
এ বিষয়ে মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. আলী আকবর বলেন, সারা দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার এবং গ্রহণকারীর হার কমলেও আমাদের সব স্বাস্থ্যকর্মীর সহযোগিতায় মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের আওতায় ৯ ওয়ার্ডেই গত পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ ও ব্যবহার দুটোই ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তেজগাঁও থানা সার্কেল পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নূরে আলম বলেন, ইতোমধ্যে সারা দেশের ৫৯২টি জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র একসঙ্গে পুনর্নির্মাণের জন্য কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ইউনিট। এর জন্য সর্বশেষ নতুন করে হাতে নেওয়া একটি প্রকল্পের আওতায় কাজ চলমান রয়েছে। ফলে মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পুরাতন ভবনের পরিবর্তে নতুন পরিকল্পিত ভবন নির্মাণের বিষয়টিও খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কর্তৃপক্ষ।