ভোগান্তির নাম ডেমরা রামপুরা সড়ক
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩২ এএম
অসংখ্য খানাখন্দে ভরা রাজধানীর ডেমরা-রামপুরা সড়কে যানবাহন ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অপ্রশস্ত ওই সড়কে খানাখন্দ ও গর্তে পড়ে যানবাহন বিকল হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সড়কের গর্তগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে ইটের সলিং দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে। আর এ সংস্কার কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। বৃষ্টি হলে সড়কটিতে পানি জমে তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরা-রামপুরা সড়কের আমুলিয়া থেকে শুরু হয়ে মেরাদিয়া এলাকা পর্যন্ত খানাখন্দ ও গর্তে ভরে গেছে। আমুলিয়া মডেল টাউন থেকে বনশ্রী এলাকার বাগানবাড়ী পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার ভাঙাচোড়া সড়কের কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলে সেই পানি দ্রুত জমে যায় সড়কে। মেরাদিয়ার বাগানবাড়ী থেকে ত্রিমোহিনী ব্রিজের ঢাল পর্যন্ত সড়কে প্রতিদিনই দু-একটি মালবাহী গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব গর্ত ইট-বালি দিয়ে মেরামত করা হলেও কয়েকদিন পর নষ্ট হয়ে যায়।
ডেমরা-রামপুরা সড়কে চলাচলকারী যাত্রী বশির উদ্দিন ও শিক্ষার্থী সালমান, কিবরিয়া ও শাহিনুর আক্তারসহ একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, ডেমরা-রামপুরা সড়কের মোস্তমাঝী মোড় থেকে রামপুরা টিভি ভবন সংলগ্ন ইউলুপ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, হাসপাতালের রোগী ও অফিস যাতায়াতকারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
ঢাকা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেরাদিয়া জমজম টাওয়ার এলাকা থেকে ৭শ’ মিটার আরসিসি ঢালাই করে সড়ক উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া মেরামত করে ওভার লেয়ারের মাধ্যমে বাকি সড়কের উন্নয়ন কাজ করার কথা রয়েছে। অথচ বাস্তবে তার কিছুই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভীর কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রজেক্ট প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান বলেন, বর্তমানে অতি বৃষ্টির কারণে আমরা আসল কাজে হাত দিতে পারছি না। আপাতত খানাখন্দগুলো এইচবিবি ইটের সলিং দিয়ে উপরে বালি এবং পাথর দিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাখতে হচ্ছে। বৃষ্টি পুরোদমে শেষ হলে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক টেকসই উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।
এদিকে ডেমরা থানাধীন অভ্যন্তরীণ প্রধান ও এলাকার সংযোগ কাঁচা সড়কেরও একই অবস্থা। খানাখন্দ ও গর্তে ভরা। ডিএসসিসির ৬৬নং ওয়ার্ডের কোদালদোয়া সড়কে জমে আছে পানি ও কাদা। মুসলিম নগর জিরো পয়েন্ট থেকে সানারপাড় পর্যন্ত সড়কটি এখনো কাঁচা। যেখানে প্রতিবছর বৃষ্টিতে পানি জমে থাকে। ওই ওয়ার্ডের বামৈল রসুলনগর সংযোগ সড়ক, বামৈল পশ্চিমপাড়াসহ ৫-৬ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক বেহাল। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৬৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব বক্সনগর বৌ-বাজার থেকে হোসেনিয়া মসজিদ পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজে পিট কভারের দেয়াল আস্তর না করেই উন্নয়ন সম্পন্ন করার পাঁয়তারা করছেন ঠিকাদাররা। গলাকাটা ব্রিজের উভয় পাশে ঢালে বড় বড় গর্ত হওয়ায় যানবাহন উলটে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অনেকে। ওই ওয়ার্ডের নিঝুমবাগ ও ঋষিপাড়াসহ অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। ৭০নং ওয়ার্ডের মোস্তমাঝীর মোড় থেকে তাম্বুরাবাদ হয়ে ঠুলঠুলিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের পিচ উঠে গিয়ে কাঁচা সড়কে পরিণত হয়েছে। খলাপপাড়া বাজার থেকে নলছাটা ইটাখোলা পর্যন্ত সড়ক বেহাল, পাইটি ওয়াসা রেড, দেইল্লা পূর্বপাড়া সড়ক, আমুলিয়া খাঁনপাড়া মসজিদ থেকে হাজী গফুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়ক বেহাল। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ৬৯নং ওয়ার্ডের আমুলিয়া থেকে ডেমরা পুলিশ লাইন পর্যন্ত সড়কে। কবরস্থান রোড, ডেমরা ঘাট থেকে বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, মীরপাড়া-নড়াইবাগ সড়কসহ ওই ওয়ার্ডের ১০-১২ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা ও অদৃশ্যমান রয়েছে। ডিএসসির ৬৪ ও ৬৫নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েক কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। ভুট্টু চত্বর রোড, মোমেনবাগ, কদতমতলা মোড় ও কোনাপাড়া ফার্মের মোড় এখন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে।
সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ইবরাহীম খলিল ও মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ডেমরা-রামপুরা সড়ক ও ডেমরা থানাধীন অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমুলিয়া-মেন্দিপুর থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ডিএসসিসির অঞ্চল-৮ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালিলুর রহমান বলেন, দ্রুত ওয়ার্ডভিত্তিক সড়ক উন্নয়ন কাজগুলো তদারকির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।