স্বপ্ন দেখিয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর সর্বনাশ করেছেন খায়রুল বাশার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম
এর আগে গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর গুলশানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা
আমেরিকা-ইউরোপে বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কয়েক শত শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের আত্মসাতকৃত টাকা ফিরিয়ে দেওয়া এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তৃতায় তারা বলেন, আমরা উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে গমনেচ্ছু সহস্রাধিক প্রতারিত শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
ক্যামব্রিয়ান এডুকেসন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর সার্কেলের বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া এবং পৃথিবীর উন্নত দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের থেকে বিপুল অংকের টাকা গ্রহণ করে। ওইসব কলেজের সেশন ফি বাবদ যে টাকাগুলো দেওয়া হয় তা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে উক্ত কলেজের সেশন ফি প্রদান করতে হয়। কিন্তু সেটি না করে মানি লন্ডারিং আইন বহির্ভূত কাজ করে তারা টাকাগুলো আমাদের থেকে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। মূলত সেই কলেজের টাকাগুলো স্টুডেন্ট একাউন্ট করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর নিয়ম। কিন্তু সেটি তারা করেনি এবং বিদেশি কলেজগুলোর ভুয়া অফার লেটার তৈরি করে টাকা না পাঠিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।
তারা আরও বলেন, এরকম ভুক্তভোগীর সংখ্যা শহস্রাধিক ও প্রত্যেকের পাওনা টাকার পরিমাণ গড়ে ২০ লাখ। তাদের দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী ৮৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। আমাদের ধারণা, হাজারো শিক্ষার্থীর ২শ কোটি টাকা ওই গ্রুপ আত্মসাৎ করেছে। বিগত সরকারের আমলে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করে। যার ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় এবং আর্থিকভাবে প্রতিটি পরিবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে অনেক দেন-দরবার করার পর পাওনা টাকার বিপরীতে বিএসবি কর্তৃপক্ষ অনেক পাওনাদারকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বাশার বাহার স্বাক্ষরিত চেক প্রদান করে, যা ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়।
টাকা উদ্ধারের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলে এবং পরে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে বিএসবির চেয়ারম্যান খাইরুল বাশারের গুণ্ডাবাহিনী আক্রমণ চালায়। এছাড়া পাওনাদারদের ক্রমাগত টাকা না দেবার হুমকি দিয়ে আসছে। এরপর চলতি বছরের ২৭ আগস্ট বিএসবি চেয়ারম্যান বাশার ও পাওনাদারদের এক প্রতিনিধি দলের সাথে এই মর্মে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যে, সমুদয় পাওনা টাকা ৩ কিস্তিতে পরিশোধ করবে। এরপর অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হয় ও তার গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। যা গুলশান থানা অবগত আছে।
এমতবস্থায় নিরুপায় হয়ে টাকা উদ্ধার ও নিরাপত্তার জন্য অনেকে জিডি, প্রতারণা ও চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছে এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা-আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। বর্তমানে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের কার্যক্রম আনুমানিক ২০-২৫ দিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে ও অদ্যাবধি বন্ধ আছে এবং সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বাসার অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে রয়েছে।
প্রায় এক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা ও ভবিষ্যতে যেন কোনো শিক্ষার্থী প্রতারিত না হয়, সেজন্য আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার, সেই সঙ্গে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এবং চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বাশার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন প্রতারিত শিক্ষার্থী রুমান আলী লস্কর, রুহুল আমিন জাহেদী, ফেরদৌস মিলন, প্রকৌশলী রুমি খান, তামান্না আক্তার, মোর্শেদ হোসেন, রিতা আক্তার প্রমুখ।