দক্ষিণখান ও উত্তরখানবাসীর মানববন্ধন
এই ভোগান্তির শেষ কবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
বিকল্প সড়ক না রেখে একইসঙ্গে সব রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু করায় সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে রাজধানীর দক্ষিণখান ও উত্তরখানে।সড়ক খুঁড়ে দীর্ঘ দিন ফেলে রাখায় বৃষ্টি ও ড্রেনের পানিতে ভোগান্তির চরম সীমায় এই দুই এলাকার ৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। কোনো রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়ার রাস্তা অবশিষ্ট নেই। রাস্তার মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সন্তান প্রসবের মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে।
এই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এখানে যে কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে ডাক্তার আসতে না পারায় প্রায় বন্ধ চিকিৎসাসেবা।
শুক্রবার রাজধানীর দক্ষিণখান বাজারে দক্ষিণখান ও উত্তরখানবাসীর আয়োজনে রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা এবং দুর্ভোগ নিরসনে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এতে এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যে এসব অভিযোগ ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।দ্রুত রাস্তার দুর্ভোগ নিরসন না হলে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ঘেরাও করার হুমকিও দিয়েছেন তারা।
‘অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা চাই, ড্রেনের পানিতে সাঁতার কাটতে চাই না, এই ভোগান্তির শেষ কবে’- এমন ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন হাজারো মানুষ।
মানববন্ধনে দক্ষিণখান-উত্তরখান সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ইয়াছিন রানা বলেন, ২০১৬ সালে এই এলাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় আসার পর থেকে পরিপূর্ণরূপে উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল। সিটি নির্বাচনের ছয় বছর পরে এসেও এখানের চিত্র বদলায়নি। বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা তলিয়ে যায়, হাঁটার মতো অবস্থা থাকে না। সড়ক খনন নীতিমালা না মেনে সব রাস্তা একসঙ্গে কাটায় স্বাভাবিকভাবে মানুষ যাতায়াত করতে পারে না। অফিস করতে উত্তরা বা বিমানবন্দর যেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।
১০ টাকার অটো ভাড়া ৫০ টাকা নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক এলাকায় কোনো গাড়িই চলাচলের সুযোগ নেই। বৃষ্টি হলেই রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ইয়াছিন রানা বলেন, গত বুধবার (৯ অক্টোবর) দক্ষিণখান বাজারে ঈদগাহ মাঠের সামনে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী হেঁটে ক্লিনিকে যাওয়ার সময় রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন। রোগীদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স এই এলাকায় ঢোকার মতো রাস্তা নেই।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় সিটি করপোরেশনের কেউ পরিদর্শনেও আসেন না। তারা উত্তরা, গুলশান, মিরপুরেই শুধু পরিদর্শন করেন। তাদের কাছে জানতে চাই, উত্তরা, গুলশানের বাসিন্দাদের ‘এ’ গ্রেডের নাগরিক আর দক্ষিণখান-উত্তরখানের বাসিন্দাদের ‘সি’ গ্রেডের নাগরিক হিসেবে কেন তারা মূল্যায়ন করছেন- তা স্পষ্ট করতে হবে।
মানববন্ধনে দক্ষিণখান-উত্তরখানের জনগণের পক্ষে ৭টি দাবি তুলে ধরেন ইয়াছিন রানা। দাবিগুলো হলো- ১. কাজের গতি যেকোনো উপায়ে দ্রুত বৃদ্ধি করা। ২. জরুরি চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লোকবল বৃদ্ধি করে চলাচল উপযোগী করা। ৩. যেসব রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে সেগুলোর একটি টাইম শিডিউল দিতে হবে কতদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে- এটা জানিয়ে প্রত্যেক রাস্তায় তা লিখে টানিয়ে দিতে হবে।৪. যে রাস্তার কাজ যে ঠিকাদার পেয়েছে সে ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা যোগাযোগের নাম্বার জানিয়ে দিতে হবে। ৫. রাস্তার কাজের মান নিয়ে সাধারণ জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, এই বিষয়ে সঠিক তদারকি করতে হবে।৬. নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ চলতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার কাজ ভালোমানের উপকরণ দিয়ে করার আদেশ জারি করতে হবে। ৭. কোনো ঠিকাদার যথাযথভাবে কাজ না করলে কিংবা অনুপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মানববন্ধনে দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খলিল মোল্লা বলেন, আমাদের দুর্ভোগ-ভোগান্তি নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। না হয় ভোগান্তি নিরসন হচ্ছে না কেন। সব রাস্তা একই সময়ে কেটে ফেলা কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে- তা জানতে চান তিনি।
আনোয়ার হোসেন জমিদার বলেন, পদ্মা নদীতে যদি সেতু করা যেতে পারে তাহলে দক্ষিণখান ও উত্তরখানের রাস্তা করতে এত দেরি হবে কেন। ড্রেনের পাইপ বসানোর পর কিউরিংয়ের জন্য ২৯ দিন রাখার কথা থাকলেও ৪-৫ মাস এভাবেই ফেলে রাখা কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে- তা জানতে চান তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করার পর কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। মোটরসাইকেলে দুইজনের মাঝে বসিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি।
মুক্তাদির মুন বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর আমরা দুই ভাই কোলে করে কিছু রাস্তা রিকশায় করে কসাই বাড়ি রেললাইন পার হই। এরপর উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়ার পথে বাবা মারা যান।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- দারুল উলুম মাদ্রাসা মসজিদের খতিব গিয়াস উদ্দিন মাদানী, ফয়সাল হোসেন, বারিকুল ইসলাম শোভন, সাজ্জাত হোসেন, এহসানুল হক শোভন, মোক্তদির মুন, মামুন হোসেন জমিদার, ডা. জাকিরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন অনিক, সাইদুল ইসলাম সুমন, মুফতি খায়রুল হোসেন, মুফতি মাসুদুর রহমান, সালাউদ্দিন, দক্ষিণখান ও উত্তরখানের ব্যবসায়ীরা।