যে কারণে নগরীতে ভয়াবহ যানজট
রাজধানীর ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে যানজটে নাকাল যাত্রী এবং চালকরা। বিকল্প পথ না থাকার অপ্রশস্ত ডেমরা-রামপুরা সড়কে অতিরিক্ত পণ্যবহনকারী যানবাহন চলাচল করায় রাতের বেলায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আর কয়েক দিন ধরে দিনের বেলায়ও ব্যাপক যানজট হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হলেও যানজট নিরসন হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশও যানজট নিরসনে যথাযোগ্য ভূমিকা নিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, স্বল্প দূরত্ব হওয়ায় চালকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও রূপগঞ্জের কাঞ্চন থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত ৩০০ ফিট সড়ক ব্যবহার না করে ডেমরা-রামপুরা সড়ক ব্যবহার করে। এমনকি ৩০ চাকারও বড় বড় যানবাহন এ রুটে চলাচল করে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা শুরু না হওয়ায় দিনের বেলাতেও প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপটে যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে রাতের বেলায় সড়ক দুটিতে যানজটে নাভিশ্বাস বাড়ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের।
তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে রাত ২টা পর্যন্ত, যা রামপুরায় নেই। কিন্তু রামপুরা এলাকায় যেতে পথিমধ্যে খিলগাঁও থানাধীন নাগদারপাড় ও ত্রিমোহনী এলাকার অপ্রশস্ত ২টি সেতুর কারণে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়।
সরজমিনে দেখা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। আর ভাড়া কম পেয়ে যাত্রীরাও সময় বাঁচাতে প্রধান সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ ওইসব যান ব্যবহার করছেন। যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ ও টিকাটুলি হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত এরা চলাচল করে সড়কে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আর সড়কে ট্রাফিক ডিউটি শতভাগ শুরু না হওয়ায় সব ধরনের যানবাহন চালকরা বেপরোয়াভাবে চলাচল করে বলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ডেমরা-রামপুরা সড়কের নাগদারপাড় ও ত্রিমোহনী সেতুর আগে পড়ে ভারী যানবাহন বিকল হলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
ডেমরা-রামপুরা সড়ক দিয়ে ৩৫ থেকে ৪৫ টন মালামাল ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। এতে একদিকে বাড়ছে যানজট, অন্যদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নষ্ট হচ্ছে সড়ক। সড়কে তৈরি হচ্ছে খানাখন্দ। এ সড়ক দিয়ে ৬ চাকার ট্রাকের পণ্য পরিবহণের সর্বোচ্চ ওজন সীমা ১৫ মেট্রিক টন। কিন্তু সেটা মানা হচ্ছে না।
ডেমরা-রামপুরা সড়কে চলাচলকারী বড় কাভার্ডভ্যান চালক মো. নিজামুদ্দিন বলেন, রাত ৯টার পরে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়ক দিয়ে চলাচল করে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন। এতে যানজট লেগে যায়।
একাধিক কাভার্ড ভ্যান চালক বলেন, ডেমরা-রামপুরা সড়ক দিয়ে চলাচল করলে আমাদের অনেকটা সময় বেঁচে যায়। এক্ষেত্রে টোলসহ অন্য খরচের বিষয়েও সাশ্রয় হয়। তবে ডেমরা-রামপুরা সড়কটিতে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক-লরি চলাচল ও দুটি অপরিকল্পিত ব্রিজ থাকায় রাতের যানজট বেশি হয়। নতুন করে সড়কটি প্রশস্তভাবে তৈরি করলে যানজট অবশ্যই কমে আসবে।
রামপুরা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. সোহরাব বলেন, রামপুরা-বনশ্রী এলাকাটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মাঝখানে পড়েছে। এক্ষেত্রে রাজধানীর প্রবেশদ্বার ডেমরা ও আব্দুল্লাপুর এলাকা থেকে বড় যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু রাতের বেলায় ১৫-২০ ফিটের মেরাদিয়া, বনশ্রী ও রামপুরা এলাকার সড়ক থেকে বড় বড় যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলে যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া রাতের বেলায় থানার টহল ডিউটি না থাকায় যানবাহন চালকরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ডেমরা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. মুসা কালিমুল্লাহ বলেন, আমি ডেমরায় নতুনভাবে যোগদানের পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। তারপরও ভিন্ন মাত্রার কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। তবে অনেক চালকরাই এখন বেপরোয়া। তারপরও আশা রাখি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কে যানজট কমে যাবে ইনশাল্লাহ।