বৈষম্যহীন দেশ গড়তে সব নাগরিককে সক্রিয় করতে হবে
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সমাবেশে বক্তারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ পিএম
বৈষম্যহীন দেশ গড়তে হলে সব নাগরিককে সক্রিয় করতে হবে, তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সব পর্যায়ে সংগঠিত শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে তাকে জাগ্রতভাবে পাহারা না দেবো, ততক্ষণ পর্যন্ত এই অধিকার আরও হরণ হতে শুরু করবে। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের যে লড়াই তা চলছে, চলবে।
শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের তীব্র সমালোচনা করেন এবং পাহাড় এবং সমতল সবখানে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের আহ্বান জানান। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো, সীমান্ত হত্যা, মাজার-মন্দিরসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, নারীদের ওপর আক্রমণ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করে জাতি ধর্ম লিঙ্গ শ্রেণি-বৈষম্যহীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নারীর ওপর হামলা, মুসলিমদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে হামলা হচ্ছে। আজকেও বায়তুল মোকাররমে সহিংসতা হয়েছে, যা অবিশ্বাস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হয়েছে, বলা হচ্ছে এটা মব জাস্টিস! কিন্তু আমি বলব এটা কোনো জাস্টিস নয়, মব ভায়ালেন্স বলতে পারেন। একটা দলবদ্ধ সহিংসতা। এটা তৈরি হচ্ছে কোন জায়গা থেকে?
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেটা দেখলাম, একজন বাঙালি নিহত হয়েছেন, তার বিচার তো অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু বাঙালি একজন নিহত হলে আদিবাসী, পাহাড়ি অন্যান্য জাতির ওপরে পাইকারি হারে কী কারণে অগ্নিকাণ্ড হবে? গুলি করে কেন হত্যা করা হবে। ইতোমধ্যে চারজন নিহত হয়েছেন। আগে দেওয়া একজন বক্তার সূত্র ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে দুই শাসন চলছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে সমতল গণতান্ত্রিক হবে। আর পাহাড়ে সামরিক শাসন চলবে, এটা তো হতে পারে না।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের হত্যাকাণ্ড মনে হয় না একটা দুর্ঘটনা মাত্র। মনে হয় এর পেছনে একটা ছক আছে। কারণ তার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা ডেকে ঘোষণা করা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষক এমনকি কর্মচারীদের রাজনীতিও চলবে না। এটা কি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফর্ম হতে পারে? দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।
তিনি আরও বলেন, ছাত্ররাজনীতি না হলে বাংলাদেশের জš§ হতো না। ছাত্ররাজনীতি না হলে আগস্ট মাসের ৫ তারিখে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হতো না। কাজেই আন্দোলনের দু মাস পার না হতেই আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা শুরু হয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ডা. হারুণ-অর-রশীদ, মানবাধিকার কর্মী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী আসমা আক্তার, আন্দোলনে আহত কলেজ ছাত্র রাব্বি, হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি পূজা রানী দাস প্রমুখ। সমাবেশ শেষে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা বন্ধ এবং পাহাড়ে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবিতে’ মিছিল বের করা হয়।