এমপির কোটি টাকার গাড়ি জব্দে পুলিশের অনীহা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ এএম
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি বাড়ির গ্যারেজে লুকিয়ে রাখা হয়েছে জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার ব্রান্ডের সাদা রংয়ের একটি গাড়ি।
গত ৩০ আগষ্ট রাত আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির ৯/এ রোডের ১৩৮ নম্বর বাড়ির গ্যারেজে এনে লুকিয়ে রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা খবর পেয়ে বাড়ির গ্যারেজে এসে গাড়িটি আটক করলেও তা জব্দ করেনি থানা পুলিশ। রাত ৯ টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা চেষ্টার পরও গাড়ি জব্দ করে থানার হেফাজতে নিতে অনীহা দেখা গেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশের।
সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ আগষ্ট দিবাগত রাত আড়াইটায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ঘনিষ্ঠ একান্ত সহযোগী শুক্কুর হাওলাদার নামে একজন গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে আসে। এরপর গাড়িটি ৯/এ রোডের ১৩৮ নম্বর বাড়ির গ্যারেজের পশ্চিম পাশে রেখে কভার দিয়ে তা ডেকে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে শুক্কুর হাওলাদার গাড়িটি তার স্যার কিনেছেন বলে জানিয়ে একটি চুক্তিপত্র বের করেন। যে চুক্তিপত্রে গাড়িটির বিক্রেতার নাম জামালপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ ১২-০৭০৩। চেসিস নং JTMAA7BIX04039039, ইঞ্জিন নং F-33A0042643, সিসি ৩৩৪৬ উল্লেখ কর হয়েছে।
তবে চুক্তিপত্রে উল্লেখ অনুযায়ী ২০২৩ সালে মডেলের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাড়িটির দাম ধরা হয়েছে মাত্র ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা জাল একটি চুক্তিপত্রের কাগজ দেখিয়ে গাড়িটি রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাম্মাদুর রহমান নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘদিন ধরে কয়েক কোটি টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার ব্রান্ডের গাড়িটি বাড়ির গ্যারেজে পরে থাকতে দেখে স্থানীয়দের মনে সন্দেহ হয়। পরে বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা আমাদের খবর দেয়। এ সময় প্রায় ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী এসে বাড়ির দাঁড়োয়ানের কাছে গাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফুল হাসান খান নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ইউসিবি ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে গাড়িটি তার বলে আমাদের জানায়।
শিক্ষার্থীরা গাড়ির বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি আমাদেরকে গালাগালি করে নানা হুমকি ধমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমরা প্রথমে ধানমন্ডি এলাকার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানালে তারা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে ডাকতে পরামর্শ দেয়। ওই সময় আমরা জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ এর মাধ্যমে ধানমন্ডি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানাই। পরে রাত ১২ টার দিকে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজ ঘটনাস্থলে আসে।
এ সময় গাড়িটি জব্দ করা নিয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলতে দেখা যায় তাকে। নানা তাল বাহানা শেষে রাত দেড়টার দিকে এনায়েত উল্লাহ নামে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি এসে আমাদের ওপর চড়াও হয়। তখন এখানে আসা সকল শিক্ষার্থীদেরকে অসভ্য ভাষায় গালাগালিসহ গুলি করার হুমকি দেয়।
আরেক শিক্ষার্থী প্রীতম হাসান জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। এ সময় দফায় দফায় সেনাবাহিনীকে কল করা হলেও তারা কোন সাড়া দেয়নি। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ আসলেও গাড়িটি তারা জব্দ করেনি।
সূত্রে আরও জানা যায়, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চোধুরী মায়ার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী শুক্কুর হাওলাদারকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে দেয় শিক্ষার্থীরা। ওই সময় তার মোবাইল ফোনটি গাড়ির মালিক দাবি করা ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল নিয়ে যায়। এর আগে তার ফেইসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের অনেক এমপি মন্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ছবি তিনি ফেইসবুকে দিয়ে রেখেছেন। এছাড়া ধানমন্ডি এলাকায় যেসব শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তাদের বিষয়ে নানা তথ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে পৌঁছে দিতেন। যা আঁড়াল করতে আশরাফুল তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ডিএমপি ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদে কাছে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না থাকায় আমরা গাড়িটি জব্দ করতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা সেখানে আসার পর আমরা তাদের কথামতো গাড়ির কাগজপত্র আমাদের হেফাজতে নিয়ে এসেছি। এছাড়াও, শহক্কুর আলী নামে একজনকে আমরা আমাদের হেফাজতে এনেছিলাম। তার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ না করায় আমরা তাকে ছেড়ে দিয়েছি।