দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিতদের জন্য আয়োজিত ‘গণত্রাণ’ কার্যক্রমে মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলে দলে আসেন। ত্রাণ সংগ্রহ করে মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সরেজমিন শুক্রবার বিকালে দেখা যায়, ঢাবির টিএসসির প্রবেশপথে একের পর এক ট্রাক, বাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার জড়ো হচ্ছে। আর এসব যানবাহনে যে যার সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে আসছেন। গাড়িগুলো থামার সঙ্গে সঙ্গেই নামানো হচ্ছে শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এসব সংগ্রহ করে ভেতরের ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম আর গেমস রুমে জড়ো করা হচ্ছে। টিএসসির গেট থেকে ভেতরের রুমে ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করছে আলাদা আলাদা গ্রুপ।
কথা হয় ত্রাণ দিতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই। ফলে এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শামিল হতে কিছু সাহায্য নিয়ে এসেছি।
এসএ ট্রেডলিং নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, আমি মিরপুর থেকে এসেছি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নই। তার পরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পাঁচটি কাপড় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি।
এদিকে শিক্ষার্থীরা সাহায্য সংগ্রহ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বুথ তৈরি করেন যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। টিএসসির প্রধান প্রবেশপথের পাশেই একটি বুথে নগদ টাকা সংগ্রহ করছেন কয়েকজন। তারই পাশে আরেকটি বুথে কাপড় সংগ্রহ করছেন আরেক দল শিক্ষার্থী।
রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মিনার হোসেন বলেন, আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ও কাপড় সংগ্রহ করে এখানে দিয়েছি। ১২ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। ফলে তাদের ওপর আস্থা আছে।
অন্যদিকে টিএসসি বাদেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল, বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের মতো করে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সামনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বক্স ও প্লাকার্ড নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
এসএম হলের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম নওশাদ বলেন, আমাদের হলে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করেছি। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বন্যাকবলিতদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান বলেন, অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে আমরা এখন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছি। ব্যক্তির ভাবাদর্শ এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে না। নিজেদের পরিচয়ের বিভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে কাজ করছে এটা খুবই ইতিবাচক। এটা যেন সামনের দিনেও থাকে এবং আরও যেন মানুষকে সংঘবদ্ধ করা যায় সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাব।
ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তারা কয়েক দিন আগে রাস্তার ট্রাফিক সামলিয়েছে। আবার এখন দেশের প্রয়োজনে তারাই ভিসি প্রক্টর প্রশাসনবিহীন এ ক্যাম্পাসে নিজ উদ্যোগে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের উদ্যোগ আগে কখনোই দেখা যায়নি।