Logo
Logo
×

রাজধানী

‘আমি তো অল্প বয়সে বিধবা হয়ে গেলাম’

Icon

যাত্রাবাড়ী (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৪:০২ পিএম

‘আমি তো অল্প বয়সে বিধবা হয়ে গেলাম’

শিশু হজরত বিল্লাল আনাসের (টাইগার) সোমবার (২৯ জুলাই) ছিল জন্মদিন। তিন বছর শেষ হয়ে ৪ বছরে পা। বাবা আদর করে তাকে টাইগার ডাকতেন। সেই বাবা আজ একমাত্র আদরের সন্তানের জন্মদিনে নেই।  গত ২০ জুলাই শনিবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান অবুঝ শিশুর বাবা সোহেল।

সোহেলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দুর্গাপুর গ্রামে। বাবার নাম সুরুজ হাওলাদার, মা হোসনে আরা বেগম। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিল সোহেল।

২০১৮ সালে বিয়ে করে স্ত্রী আয়েশা আক্তার কোহেল ও একমাত্র পুত্রসন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কদমতলীর দক্ষিণ দনিয়া বায়তুস সালাম জামে মসজিদ গলির বাবুর ৩য় তলা বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সোহেল পেশায় একজন মোবাইল সার্ভিসিং মেকার ছিলেন। রাজধানীর শনিরআখড়ার আরএস শপিংমলে ৪র্থ তলায় ৪১ নম্বর দোকান ছিল তার নিজের। দোকান আর বাসা ছাড়া কোথাও যেতেন না। কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না। কোটা সংস্কার আন্দোলনেও ছিলেন না।

২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংগঠনের লোকজনের পালটাপালটি ধাওয়া উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। এদিন বিকালে সোহেল তার বাসার ছাদে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসে ছিলেন। এ সময় তার স্ত্রীকে আম খাওয়াতে বলেন। স্ত্রী আয়েশা বাসা থেকে আম কেটে নিয়ে স্বামীকে খাওয়ান। এ সময় বাড়ির মালিক বাবুও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

কিছুক্ষণ পর আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির নিচে গণ্ডগোল হচ্ছে এমন একটা কথা শোনে বাসার নিচে নামেন সোহেল। বাড়ির মালিকও নিচে নামেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ সোহেলের বুকে গুলি লাগে। বাড়ির মালিক সোহেলের স্ত্রীকে ডেকে বলে সোহেলের বুকে গুলি লেগেছে।

সোহেলের স্ত্রী স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় স্বামীকে কোলে নিয়ে অটোরিকশায় দোলাইরপাড় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সোহেলের স্ত্রী আয়েশা যুগান্তরকে বলেন, আমার স্বামীকে যখন কোলে করে হাসপাতালে নিই, তখন তার শরীর থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। সোহেলের বুক দিয়ে গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়। মূলত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের খুব আদরের সন্তান হজরত বিল্লাল আনাস (টাইগার)। ছেলে বাবার কাছে যা চাইত তা-ই কিনে দিতে বাধ্য হতো সোহেল। সে জন্য ছেলেকে আদর করে নাম রেখেছে টাইগার।

তিনি আরও বলেন, ২৯ জুলাই সোমবার আমাদের আদরের সন্তান হজরত বিল্লাল আনাস ৪ বছরে পড়ল। সোহেল আজ বেঁচে থাকলে ছেলেকে নিয়ে দোকানে যেত। ছেলে আজ বাবার কাছে যা চাইত তা-ই পাইত। কত উপহার ছেলেকে কিনে দিত। কিন্তু আর কে কিনে দেবে। শিশু হজরত এখনো বুঝে না তার বাবা চিরবিদায় নিয়েছে। তার বাবার বাইক দেখে বলে ঘুরতে যাব। ছবি দেখে বলে বাবাকে ডাক্তার সুই দিয়েছে বাবা ঘুমিয়েছে। সোহেল খুব হাসিখুশি লোক ছিল। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বহু কাস্টমার বাসায় এসে কান্নাকাটি করেছে।

সোহেলের স্ত্রী আরও বলেন, আমার স্বামী তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। কেন তাকে গুলি করে মারা হলো। বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানই ছিল তার দুনিয়া। তা ছাড়া অন্য কিছুতে সে ছিল না।

তিনি বলেন, বিচার কি চাইব, কার কাছে চাইব, আমি তো অল্প বয়সে বিধবা হলাম, আমার সন্তান ৪ বছর বয়সে বাবা হারা হলো। আমার স্বামীকে যারা মেরেছেন, মহান আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত দান করেন।

আয়েশা আরও বলেন, বিভিন্ন দাবি সরকারপ্রধানের কাছে চাইতেই পারে, আন্দোলন করতে পারে, আন্দোলন করছে করুক, আর যেন কোনো হত্যা না হয়। আমার মতো যেন কোনো স্ত্রী এভাবে স্বামী হারিয়ে বিধবা না হয়। সে-ই ছিল আমাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ করে গেছে। সেই ঋণ শোধ করার কোনো ক্ষমতা আমার নেই।

সোহেলের শ্বশুর হাসেম বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে আমি অসহায় হয়ে গেলাম। আমার নাতির কি হবে। শাশুড়ি ইভা বেগম বলেন, আমার মেয়ের মতো যেন এমন কেউ না হয়। স্বামী হারা বেদনা যে কি, যে হারিয়েছে সে বুঝবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম