তিন দিন ছুটির পর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম
ছবি: যুগান্তর
তিন দিনের ছুটির পর আজ সোমবার সকাল থেকে মূল সড়ক ও অলি-গলিতে যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল রোববারও শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ছিল সরকারি ছুটি। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই সারা দিন সড়কে তীব্র যানজট লেগে ছিল।
রমজানে বদলেছে অফিসের সময় সূচি। মুসল্লিরা যেন কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন সেজন্য ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগও কাজ করছে সড়কে। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ নজর থাকায় গত কয়েক দিন যানজট সহনীয় মাত্রায় ছিল। তবে সপ্তম রমজানে এসে এ চিত্র বদলে গেছে।
কয়েক দিন সড়কের অবস্থা স্বস্তিদায়ক থাকলেও আজকের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পাড়া-মহল্লার গলি থেকে শুরু করে ভিআইপি সড়কেও জট লেগে থাকতে দেখা যায়।
সরেজমিন রাজধানীর মোহম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, কাওরানবাজার, সোনারগাঁও, সাতরাস্তা, মহাখালী, বনানী, কাকলী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, গুলশান-১, গুলশান-২, লিংকরোড, প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র।
যানজট থেকে বাদ যায়নি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও। মূল সড়কে নামার মুখে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায় গাড়িগুলোকে। কোথাও কোথাও যেন ঘুরছিল না গাড়ির চাকা।
আগারগাঁও মোড়ে গুলশানগামী মোটরসাইকেল আরোহী আরিফুল বলেন, রমজান মাসে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা করা হয়েছে।
বাস বা প্রাইভেটকার চালকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। মিরপুর-১০ থেকে বাস ছেড়েছে, আগারগাঁও ক্রসিং থেকে বিজয় সরণি পার হতেই ৪০ মিনিট লেগেছে। গাড়ির চাকা ঘুরেছে তবে খুবই মন্থর গতিতে। সড়কের অবস্থা দেখে হেঁটেই তেজগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন অনেকে। মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি বাস উড়োজাহাজ সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছার পর ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন যাত্রীরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের শেরেবাংলা নগর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. তারেক সেকান্দার বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। অফিস টাইম ও স্কুল টাইম একই সময় হয়ে গেছে। যে পরিমাণ যানবাহন সড়কে সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে নামছে, তা সামাল দেওয়া কঠিন। শুধু শেরেবাংলা নগর এলাকায় নয়, সবদিকে আজ সকাল বাজে গেছে। তবে সকাল সোয়া ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তা এখন সচল।
ট্র্যাফিক গুলশানের (ট্রাফিক-মহাখালী জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম রনি জানান, মহাখালী এলাকার অবস্থা ভালো না। তিনদিন ছুটি ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস বিভিন্ন জেলার গন্তব্যে ছাড়ার চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে যানজট বেড়েছে।
ট্রাফিক-গুলশানের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন বলেন, গাড়ির পেছনে গাড়ি। এক ইঞ্চি জায়গাও তো খালি রাখার উপায় নাই। সামনের গাড়ি এগোতে না পারলে পেছনের গাড়ির তো সামনে যাবার উপায় নাই। আমাদের ট্রাফিকের সব সদস্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
রমজানে ঢাকার যানজট নিরসনে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, সেবা সংস্থা, ব্যবসায়ী, দুই সিটি করপোরেশনসহ ২২টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
রমজান শুরুর আগে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, যানজট লেগেই থাকে এবং জনসমাগম বেশি এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে ডিএমপি। ইফতারের আগমুহূর্তে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ও প্রতিটি থানা পুলিশকে এ সময়ে ট্র্যাফিক সদস্যদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে থানা পুলিশকে ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। সব ট্র্যাফিক ও ক্রাইম বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। এছাড়া ট্র্যাফিক বিভাগে ফোর্স বাড়ানো হচ্ছে। রমজানে সড়কে উন্নয়ন কাজ এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ওয়াসা, তিতাস, সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে সোয়া ২ কোটি মানুষ বাস করে। পুলিশ এখানে রাতারাতি যানজট সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। তাই সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।