Logo
Logo
×

রাজধানী

ঝুঁকিপূর্ণ পুরান ঢাকা

এখনো বহাল হাজারো কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানা

Icon

কাওসার মাহমুদ

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম

এখনো বহাল হাজারো কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানা

নগরীর পুরান ঢাকার অলিগলিতে অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন ও প্লাস্টিক কারখানাগুলো যেন একেকটি অগ্নিবোমা। প্রায়ই এসব কারখানা ও গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। 

দেড় যুগে এ এলাকায় ছোটবড় অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাধিক মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার পর দায়সারা তদন্ত কমিটি হয়েছে, কাজের কাজ কিছু হয়নি। আর ওইসব ঘটনায় হওয়া অধিকাংশ মামলার বিচার হয়নি। ফলে কারখানা ও গোডাউনগুলো বহাল তবিয়তে রয়েছে। 

নিমতলী ঘটনার পর পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাগুলো থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করতে বলা হয়। 

এরপর সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে ১৯২৪ জন ব্যবসায়ীর তালিকা করে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে হস্তান্তরও করে। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থায়ীভাবে মুন্সীগঞ্জের তুলশীখালীতে কেমিক্যাল পার্ক নির্মাণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিককে। 

তবে আপৎকালীন সুরক্ষার জন্য পোস্তগোলায় একটি কেমিক্যাল গোডাউন নির্মাণ করতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনকে (বিসিআইসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিসিআইসি গোডাউন নির্মাণ করলেও আজও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম সেখানে স্থানান্তর হয়নি।

এখনো আগের জায়গায় রয়ে গেছে রাসায়নিক গুদামগুলো। তাই আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখনো ওই এলাকার অলিগলিতে কেমিক্যাল গুদাম ও প্লাস্টিকের জুতার কারখানা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিমতলী, নবাবকাটরা, আগামসী লেন, চকবাজার এলাকার বাসিন্দারা।

নিমতলী ট্র্যাজেডিতে নিহত সাত বছর বয়সি বৈশাখের বাবা মামুন মিয়া বলেন, ওইদিন আমার ছেলে দোকানে ঘুমিয়েছিল। গরম কেমিক্যাল আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমি তখন দোকানের বাইরে ছিলাম। দৌড়ে দোকানের কাছে গিয়ে ছটফট করতে করতে ছেলেকে মরতে দেখেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। কারণ, যেই বাঁচাতে যাবে, সেই মরবে। মামুন মিয়ার দাবি, নবাবকাটরা এলাকায় কেমিক্যালের গুদাম কমে গেছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। এখনো নবাবকাটরা, আগামসী লেন, নাজিরাবাজার, মিডফোর্ড, কায়েতটুলী, চকবাজার, ইমামগঞ্জ, সোয়ারীঘাট ও কেরানীগঞ্জের অনেক বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম রয়েছে। 

জানাতে চাইলে ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আব্দুল আওয়াল যুগান্তরকে বলেন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের অধিকাংশ গুদাম সরে গেছে। বিশেষ করে নবাবকাটরায় কেমিক্যালের গুদামের পরিমাণ আগের তুলনা অনেক কম। সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সংস্থার তৎপরতার মুখে এখন আর কোনো বাড়িওয়ালা কেমিক্যালের গুদাম হিসাবে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন না। যদিও অনেকেই গোপনে কেমিক্যাল গুদাম হিসাবে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। এমন বাড়ির মালিকের সংখ্যাও কম। 

শুধু কেমিক্যাল করাখানা নয়, পুরান ঢাকা ও আশপাশের এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও একেকটি অগ্নিবোমা। লালবাগের রয়েল হোটেলের প্রবেশমুখের ডান পাশে তন্দুরি কিচেন। সাজানো টিপটপ রেস্টুরেন্টটির দোতলার সিঁড়িটি সরু। জরুরি বের হওয়ার দরজা নেই। নেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও ফায়ার লাইসেন্স। 

পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের হাজী ও হানিফ বিরিয়ানির সামনে এলপিজি গ্যাসের চুলা না থাকলেও হোটেলে ঢুকতে দুই পাশে এমনভাবে টেবিল দেওয়া হয়েছে, দুজন মানুষ পাশাপাশি পার হতে পারেন না। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। ওই সড়কটিতে অন্তত ১০টি ছোটবড় হোটেল-রেস্টুরেন্টে পর্যাপ্ত আগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই। 

সাতরওজা এলাকার নবাব, সুলতান’স ও লালবাগের রয়েল হোটেলসহ কেল্লার আশপাশের অভিজাত হোটেল এবং মিটফোর্ড ও সদরঘাট এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই। 

সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডের ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্ট ও বৈশাখী রেস্তোরাঁ, গুলিস্তানের কয়েকটি হোটেলের সামনে-পেছনে রান্নাঘর রয়েছে। আধিকাংশ হোটেলে এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া হোটেলগুলোয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কিংবা ফায়ারিং এক্সটিংগুইশার অপর্যাপ্ত। 

জানতে চাইলে ডিএমপির লালবাগ জোনের পুলিশ কমিশনার মাহবুব উজ জামান বলেন, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে লালবাগ এলাকায় হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম