Logo
Logo
×

রাজধানী

বেইলি রোডে ভয়াবহ এই আগুনের দায় নেবে কে? 

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম

বেইলি রোডে ভয়াবহ এই আগুনের দায় নেবে কে? 

ছবি: সংগৃহীত

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বেরিয়ে আসছে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিনকজি কটেজ ভবনের নানা অনিয়ম। আটতলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনে ছিল না রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমোদন। অথচ প্রায় প্রতিটি তলাতেই ধুমধামে চলেছে নামিদামি আটটি রেস্টুরেন্ট। শুধু গ্ৰিনকজি নয়, বেইলি রোডের আশপাশের সব ভবনের প্রায় একই অবস্থা। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে এগুলোর সাজসজ্জাও হয়েছিল খুবই দাহ্য উপকরণে। 

শুধু তাই নয়, যে ২২ শর্তে ফায়ার সেফটি প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছিল, তার একটিও কেউ অনুসরণ করেনি। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ তিন দফায় এসব নিয়ে নোটিশ দিলেও আমলে নেননি ভবন মালিকরা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বেইলি রোডের এই ভবনটিতে এতগুলো রেস্তোরাঁ বসানোর বৈধতা ছিল না, ফায়ার সার্ভিস তাদের নোটিশও দিয়েছিল, কিন্তু ভবন মালিক আর কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। সুযোগ ছিল ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে ভবনের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার, কিন্তু তারা চিঠি দিয়েই খালাস।

আরও পড়ুন: অভিশ্রুতি অথবা বৃষ্টি খাতুন, কেন পরিচয় বদলান এই সংবাদিক?

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)-২০০৬ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী, ভবন ব্যবহারের পূর্বে অনুপেন্সি সার্টিফিকেট (বসবাস বা ব্যবহার সনদ) নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। ভবন মালিক ভবন ব্যবহারের জন্য রাজউক বা ফায়ার সার্ভিসের অনুপেন্সি সার্টিফিকেট ব্যতীত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশন হতে ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাওয়ায় রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিকল্পিত এলাকা ব্যতীত রেস্টুরেন্টসহ কোনো ভবন ব্যবহারের জন্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়া হয় না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দেখার দায়িত্বে আছে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, ডিপিডিসি, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বিস্ফোরক অধিদপ্তর। সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা এগুলো দেখেও না দেখার মতো থাকেন।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-এর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে রাজউক আওতাধীন এলাকার ভবনগুলো নির্মাণের পর ভবন ব্যবহারের পর্বে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট (ভবন ব্যবহার ছাড়পত্র) গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিকরা এ সনদ নেননি। দুর্ঘটনার পর ডেভেলপার ও ফ্লোর মালিকদের ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হকের মোবাইল নম্বরও বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের মামলা

রাজউকের বিসি কমিটি অনুমোদন দেওয়ার সময় একটি ফায়ার সিঁড়ি দেখে অনুমোদন দেয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী কমার্শিয়াল বিল্ডিং ২ তলার বেশি ও ভ্রমণ দূরত্ব ২৩ মিটারের বেশি হলেই দুটি ফায়ার এক্সিট রাখতে হয়। 

রাজউক সূত্রে জানা যায়, দোতলার ওপরে কোনো কমার্শিয়াল ভবন তৈরি হলে ১.৫০ প্রস্থ ফ্লাইটের দুটি ফায়ার সিঁড়ি রাখতে হয় কিন্তু বেইলি রোডের ভবনের মাত্র একটি সিঁড়ি দেখেই আটতলার এই ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বেইলি রোডের বিল্ডিং স্থপতি মুহতাবা সাইফুল। তবে রাজউক এই ভবনটি একটি বেইজমেন্টসহ আট তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক হিসেবে অনুমোদিত হয়েছে ২০১১ সালে। আর রাজউক এর অনুমোদন ব্যতীত ভবনে নির্মিত রেষ্টুরেন্টর ব্যবসা করার জন্য প্রতিবছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম জানান , ৭.৫ কাঠা জমির ওপর এ ভবনের অনুমোদন নেয় হামিদা খাতুন গং ও আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। আটতলা বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ভবনটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য, কোনও রেস্টুরেন্ট কিংবা খাবারের দোকান নয়।

আরও পড়ুন: গ্রিনকজি কটেজের আগুন কেড়ে নিল বহু প্রতিভা

তিনি আরও জানান, ভবনটি শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন ছিল। রেস্টুরেন্ট, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

স্থপতি ইকবাল হাবিবের কাছে প্রশ্ন ছিল, বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনে এত মানুষের মৃত্যুর দায় আসলে কার? জবাবে তিনি বলেন, একটি ভবন গড়ে ওঠা থেকে শুরু করে এর কার্যক্রম চলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে সরাসরি ছয়টি সংস্থা যুক্ত থাকে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। কারণ এসব সেবা সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এমন ভবন গড়ে ওঠা ও এর কার্যক্রম চলার কথা।

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিনকজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভবনটিতে দুটি লিফট ও একটি সরু সিঁড়ি ছিল। তবে জরুরি ফায়ার এক্সিট ছিল না। ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ও লোকজন বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম