Logo
Logo
×

রাজধানী

‘স্ত্রী চাইছিলেন স্বামী বাঁচুক, স্বামী চাইছিলেন স্ত্রী বাঁচুক’

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:২৩ পিএম

‘স্ত্রী চাইছিলেন স্বামী বাঁচুক, স্বামী চাইছিলেন স্ত্রী বাঁচুক’

হাসপাতালের বিছানায় উদ্ধারকারী রাকিব। ছবি: সংগৃহীত

বিপদে পড়লে মানুষ কেউ কাউকে চিনতে চায় না, বাঁচতে চেষ্টা করে নিজে। তবে রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় নিহত এক দম্পতি যেন মারা যাওয়ার আগে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ দেখিয়ে গেলেন। 
হাসান ও সুমাইয়া দম্পতির পরস্পরকে বাঁচানোর আকুতিভরা গল্প শুনিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের কর্মী শেখ রাকিব। 

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে গ্রিনকজি কটেজ নামের একটি বহুতল ভবনের নিচতলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে ভবনটির অন্যান্য তলায়। ব্যাপক ধোঁয়া ও প্রচণ্ড গরমে ভবনের ভেতরে আটকেপড়া মানুষের অবস্থা দিশাহারা। ধোঁয়াচ্ছন্ন ভবনে কেউ কাউকে দেখতেও পারছিল না। এমন অবস্থায়ও ভবনটিতে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে রেড ক্রিসেন্টসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

আরও পড়ুন: বেইলি রোডের আগুনে আ.লীগ নেতার মৃত্যু

যারা উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন, তাদের একজন শেখ রাকিব। তিনি আটকেপড়া ১১ জনকে নিজ হাতে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অবশ্য সাতজন রাতেই মারা গেছেন। রাকিব নিজেও এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। আটকেপড়াদের সবাই যখন নিজের জীবন বাঁচাতে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছেন, তখন এই উদ্ধারকর্মী ভিন্নধর্মী এক ঘটনার সাক্ষী হন। 

সেই ঘটনার হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন রেড ক্রিসেন্টের এই স্বেচ্ছাসেবক। তিনি বলেন, ‘সময়টা ঠিক মনে নেই। ভবনের ভেতর থেকে এক নারী ও এক পুরুষকে উদ্ধার করে এনে আমার কাছে দেওয়া হলো। আমি মূলত অ্যাম্বুলেন্সে করে উদ্ধার করা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলাম সেই সময়। 

রাকিব বলেন, এই দুজনকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য যখন অ্যাম্বুলেন্স ছাড়ল, তখন উভয়েই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ সময় করণীয় হলো, তাদের বুকে চাপ দিয়ে দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা। যেহেতু লোক দুজন আর আমি একা মানুষ, তাই দুজনকে একসঙ্গে প্রেস করতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পুরুষ ব্যক্তির বুকে প্রেস করছিলাম, আবার তাকে বাদ দিয়ে নারীর বুকে প্রেস করছিলাম। অনেকক্ষণ আটকা থাকায় তাদের শ্বাসকষ্ট প্রকট ছিল।

সময় যত গড়াচ্ছিল ওই দুজনের অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগল উল্লেখ করে শেখ রাকিব বলেন, এমন সংকটে পড়ে আমার অবস্থা দিশাহারা। যানজটের কারণে দ্রুত হাসপাতালেও পৌঁছাতে পারছিলাম না। রাস্তায় আটকে থেকে তাদের ছটফটানি দেখছিলাম। একপর্যায়ে দুজনের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকল। তখন পুরুষটি আমাকে বারবার বলছিলেন, নারীটির বুক ভালোভাবে যেন প্রেস করা হয়। আমি যখন নারীর বুকে প্রেস করতে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি অনুনয় করে বলছিলেন, তাকে বাদ দিয়ে পুরুষটিকে যেন ভালোভাবে বুকে প্রেস করা হয়। তাদের এই আচরণ আমাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। আমি কী করব, ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। জীবনে অনেক ক্রাইসিস দেখেছি, এতটা দ্বিধায় কখনো পড়িনি।’ 

একপর্যায়ে যানজট ঠেলে যখন রাকিব সেই দুজনকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান, তখনো তারা বেঁচে ছিলেন। পরে অবশ্য দুজনই মারা গেছেন। মারা যাওয়ার পর এই উদ্ধারকর্মী জানতে পারেন, তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। 
রাকিব জানালেন, এই দম্পতির একজনের নাম হাসান ও অন্যজন সুমাইয়া। 

উদ্ধারকাজে থেকে নিজেও অসুস্থ হয়ে গেছেন রাকিব। তারও দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট। শুক্রবার সকালে তাকে দুই ঘণ্টা অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়েছে। গলা ও বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে সেই দম্পতির অসহনীয় অবস্থার কথা ভাবছিলেন। নিজের অসুস্থতা ছাপিয়ে সেই দম্পতির একে অপরকে বাঁচানোর আকুতিই তাকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। রাকিব জানালেন, অ্যাম্বুলেন্সের সেই ঘটনাগুলো তার জীবনে হয়তো একটি ট্রমা হয়ে থাকবে। 

রাকিব আরও বলেন, এমন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করা ব্যক্তিদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা হলো সিপিআর, অর্থাৎ বুকে চাপ দেওয়া। তবে এটার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত লোক হলে ভালো হয়। কিন্তু আমাদের এমন প্রশিক্ষিত জনবল ছিল না বললেই চলে। 
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম