এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয়, সন্তান হারানো বাবার আর্তনাদ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪ পিএম

দুই সন্তানের আবদার মেটাতে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন পপি রানি। বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে তার সঙ্গে মারা গেছে দুই সন্তানও। মধ্যরাত থেকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শিপন পোদ্দার।
বৃহস্পতিবার রাত পৌন ১০টায় বহুতল ভবনটিতে লাগা ভয়াবহ আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩ ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে বাণিজ্যিক ভবনটি।
ওই দিন ৮টার দিকে গ্রিন কোজি নামের এই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান শিপন পোদ্দারের স্ত্রী পপি রানি। সঙ্গে ছিল সাত বছর বয়সি ছেলে সংকল্প ও ১৩ বছর বয়সি মেয়ে সম্পূর্ণা।
শিপন পোদ্দার বলেন, ‘ওরা যখন ওখানে গেছে, তখনই আগুন লেগেছে। আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি ঢাকার বাহিরে ছিলাম। যখন শান্তিনগর মোড়ে আসলাম তখন আর কেউ ফোন ধরছিল না।’
রাত পৌনে ১০টার দিকে গাড়িচালক মোশাররফ হোসেনকে ফোন দিয়ে বাঁচার আকুতি জানান পপি রানি। কথা বলতে বলতেই নিস্তেজ হয় যায় তার কণ্ঠ।
আরও পড়ুন: অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিলেন রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ার-ওয়েটার
তিনি বলেন, ‘আমাকে ফোন দেয় যে আমরা আটকা পড়েছি আগুনে। কোথায় লেগেছে? বলে যে রেস্টুরেন্টের নিচে থেকে আগুন আসছে। তখন তাদের বলা হয়েছে যে, আপনারা ওপরে চলে যান ছাদের দিকে। ছেলেমেয়ে, মা তিনজনের কেউ-ই আর থাকল না।’
একই পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শিপন পোদ্দার। বলেন, এমন মৃত্যু যেন আর কারও না হয়।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে পপি রানির এক স্বজন বলেন, ‘আমি ১০টার দিকে খবর পেয়েছি। ভাইয়ের শাশুড়ি ফোন করেছে যে, বেইলি রোডে আগুন লেগেছে। ওরা ওখানে গেছে। আটকা পড়েছে। তখন থেকেই শুধু চারদিকে ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছি। কাচ্চি ভাইয়ে রাতের ডিনার শেষ করে আসবে। ওরা শান্তিবাগে থাকে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে গেছে। বলেছে যে খেয়েই বাসায় ফিরব।’
স্বজন হারিয়ে কাঁদছেন জিহাদ জোয়ার্দার। তার মামা কামরুল হাসান রকি ছিলেন কাচ্চি ভাইয়ের ক্যাশিয়ার।
ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে আহাজারি দেখা গেছে বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ হারানো আরও অনেকের স্বজনের।
বেইলি রোডে ভবনে আগুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ৭৫ জনের মধ্যে মারা যান প্রায় অর্ধশত। নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ এখন পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আরও অন্তত ২৫ জন। যাদের বেশিরভাগেরই পুড়ে গেছে শ্বাসনালি।
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে রাত পৌনে ১০টায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। ৯টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে। একে একে যোগ দেয় ১৩টি ইউনিট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় পোশাকের দোকানও রয়েছে।
ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।