ট্রাকভর্তি লাশ, ঢামেকে যেন মৃত্যুর মিছিল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৬ এএম
নিমতলি থেকে চুড়িহাট্টা, বঙ্গবাজার থেকে বনানী, রাজধানী ঢাকায় যতগুলো বড় আগুন আর হতাহতের ঘটনা, সব কিছুর সাক্ষী এই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট।
আবারও যেন সেই বিভীষিকাময় রাত ফিরে এলো ঢামেক হাসপাতালে। অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। আছে লাশের স্তূপ, দগ্ধ ও আহত রোগীদের চাপ। মৃত্যুর মিছিলে যেন পরিণত গোটা জনপদ।
শুক্রবার রাত ১টা ২৪ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল প্রাঙ্গণে আসে বিরাট এক কাভার্ডভ্যান। ফায়ার সার্ভিসের এই রেফ্রিজারেটর স্টোরেজ ট্রাকটি দেখে স্বজনদের আর বুঝতে বাকি থাকে না এর ভেতরে রয়েছে কেবলই লাশ। ট্রাক থেকে নামানো হয় একে একে দশটি মরদেহ। শুরু হয় উচ্চশব্দে কান্না। ট্রাকের ভেতরের মানুষরা যাদের কাছের মানুষ নন, তাদেরও চোখ মুছতে দেখা গেল।
বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে নিহত ৪৪ জনের মধ্যে ১০ জনের মরদেহ রাখা হয়েছে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে। এ ছাড়া ৩৩টি মরদেহ রয়েছে ঢাকা মেডিকেল মর্গে। একটি মরদেহ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে (সিপিএইচ) রয়েছে।
প্রিয়জনের খোঁজে স্বজনদের ভিড়। কেউ ছেলে হারিয়েছেন, কেউ বোন, আবার কেউ হারিয়েছেন সহপাঠী। ঢাকা মেডিকেল আর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সেখানে থাকা নিহতের একজন স্বজন বলেন, বাচ্চাকে বাঁচিয়ে মা মারা গেছে। সবাইকে বাঁচিয়ে সে মারা গেছে। আমার ভাইয়ের স্ত্রী, দুই বাচ্চা, সবাইকে সে বাঁচিয়েছে। আরেক স্বজন বলেন, মরদেহ অনেক। এক জায়গা থেকে খোঁজ নিতে আরেক জায়গায় যাচ্ছি। এত মরদেহ যে, স্থান সংকুলান হয় না।
এর মাঝেই কেউ খুঁজে ফিরছেন প্রিয়জনকে। কাছের মানুষ জীবিত আছেন না মৃত, সেই শঙ্কাতেই হাসপাতালজুড়ে ছোটাছুটি। রাতভর স্বজনহারাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল ও বার্ন ইনস্টিটিউট।
চোখে অশ্রু নিয়ে নিহতের এক স্বজন জানান, আমার পরিবারের ৩ জন ছিল, সবাই মারা গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আগুনের ঘটনায় নারী ভুক্তভোগীর বেশিরভাগ মারা গেছে বলে দাবি আরেক স্বজনের।
আহত কিংবা দগ্ধ অবস্থায় যারা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যেও ২২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আহত ২২ জনের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক, তাদের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। অনেকের শরীরের বাইরের অংশে পোড়া নেই, কিন্তু ভেতরে পুড়ে গেছে। শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে রয়েছে ৮ জন আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ১৪ জন।
মরদেহ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া রাতেই শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।