আশফাকুল হকের বাসার গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য
মোহাম্মদপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০১ পিএম
ছবি-যুগান্তর
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি আবাসিক ভবনের নবম তলা থেকে থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। প্রীতি উড়ান (১৫) নামের ওই কিশোরী ওই ভবনের বাসিন্দা সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামে, বাবার নাম লোকেশ উড়ান।
পুলিশ বলছে, মেয়েটি নয়তলা থেকে পড়ে মারা গেছে। তবে ভবন থেকে ফেলে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা সকালে ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও করেছেন।
এর আগেও আশফাকুল হকের বাসার ৯ বছরের এক শিশু গৃহকর্মী লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ভবনের নিচ থেকে পুলিশ ১৫ বছর বয়সি প্রীতি উড়ানের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় পুলিশ সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া হকসহ ওই বাসা থেকে ছয়জনকে থানায় নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বহুতল একটি ভবনের নয়তলা থেকে কখনো কেউ লাফ দিয়ে পড়ার সাহস পাবে না। গত বছরের ৬ অগাস্টও একই ধরনের ঘটনা ঘটে আশফাকুল হকের বাসায়। সেবার ফেদৌসি নামে এক শিশু গৃহকর্মী লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া হক ও শিল্পী নামের আরেক নারীকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। সেই সময় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজানো হলেও শিশু মেয়েটির পুরো শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই আবার একই ধরনের ঘটনা ঘটল।
প্রত্যক্ষদর্শী শাহজাহান রোডের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম যুগান্তরকে জানান, সকালে আমার ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ মনে হলো কাউকে ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তখন আমার চিৎকারে বাসার দাঁরোয়ান ও আশপাশ থেকে লোকজন দৌঁড়ে এসে মেয়েটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাকে উদ্ধারের সময় তার শরীরে জামা থাকলেও পরনে কোনো কিছু ছিল না। মনে হলো তাকে ধর্ষণ করে ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরেক বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম যুগান্তরকে জানান, মাঝেমধ্যে ওই বাসা থেকে মেয়েটির চিৎকার করে কান্নার শব্দ শোনা যেত। আজকে মেয়েটিকে উদ্ধারের সময় দেখা গেল তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের কালো দাগ রয়েছে। এ সময় তার শরীরে জামা থাকলেও পরনে কোনো পায়জামা ছিল না।
ওই এলাকার এক খাবারের দোকানের বিক্রেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শাহজাহান রোডে জেনিভা ক্যাম্প সংলগ্ন ওই ভবনের ওপর থেকে সকাল ৮টার দিকে মেয়েটি পড়ে যায়। ওই বাসায় আগেও এরকম ঘটনা ঘটছিল। এরপরে স্থানীয় লোকজন ‘মাইরা ফেলছে, বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে বাড়ির ফটকে জড়ো হয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে, বাসার লোকজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভূঞা যুগান্তরকে জানান, ঘটনার পর আমরা গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। তাকে সব রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আমরা তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করব।
তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও ওই বাসায় এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন ওই গৃহকর্মীর মা বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ওসি আরও জানান, আজকের ঘটনায় আমরা গৃহকর্তা, তার স্ত্রী-সন্তান এবং শ্যালক ও তার স্ত্রীসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে নিয়েছি।
ভুক্তভোগীর পরিবারকে ইতোমধ্যে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা হয়েছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।