ডিএনসিসির সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা
মশা নিয়ন্ত্রণ কাজ ঢেলে সাজাতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:১৩ এএম
সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ কাজ ঢেলে সাজাতে হবে। এডিস মশা ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণের ক্রুটিগুলো চিহ্নিত করে বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে।
গুলশানে নগর ভবনে সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় বছরব্যাপী প্রস্তুতি এবং করণীয়’। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১ মৃত্যু, আক্রান্ত ১১
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। এই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা যেমন রাজউক, এয়ারর্পোট, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তাদের নিজ নিজ জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ড্রেনে এবং ময়লায় ডেঙ্গু মশার প্রজনন আসলে কম হয়। গবেষণায় উঠে এসেছে বাসাবাড়ির স্বচ্ছ পানিতেই এডিস মশা বেশি হয়।
তাই জনগণকে যার যার বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে, এ বিষয়ে সচেতন হতেই হবে। বছরব্যাপী এসব নিয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সরকার ভেকসিনের বিষয়ে কাজ করছে।আমার বিশ্বাস একটু সময় লাগলেও ভেকসিনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, একসময় দেশে কালাজ্বর ছিল। সেটা নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৪ সালে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে কাজের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য থাকার দরকার ছিল। আমাদের কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতার অভাব আছে। প্রশিক্ষিত লোকের অভাব আছে, তাই এখন থেকেই কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতার প্রশিক্ষণ দিয়ে কীটতত্ত্ববিদ বাড়াতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে টেকনিক্যাল কমিটি করতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু জরিপ করতে হবে। ল্যাবের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের সিড এনেছে। অনুমতি পেলে অচিরেই ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে। এসব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও উত্তর সিটি করপোরেশন এক সঙ্গে কাজ করছে। সিটি করপোরেশনের অনেক কাজ করার পরও ডেঙ্গুর ব্যাপারে তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না কেন কারণ বের করতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশনের ওপরে দায় চাপিয়ে নয় বরং জনগণকে নিজ নিজ জায়গা থেকে বছরজুড়ে সচেতন থাকতে হবে, কাজ করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাসার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। মশা দুই ধরনের হয়। যখন সাধারণ মশার সঙ্গে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশাকে মেশানো হবে, ততদিন দেশ থেকে ডেঙ্গু যাবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা করা দরকার। সিটি করপোরেশনকে মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ভাগ করে ফেলতে হবে। সেখানে থাকবে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ও কিউলেক্স ম্যানেজমেন্ট। ৪৩ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রজনন হয় মাল্টিস্টেরয়েড বিল্ডিয়ের বেজমেন্টে। ২৩ শতাংশ ডেঙ্গু হয় নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্টে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের গৃহীত মশক নিধন কার্যক্রম সঠিকভাবে মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। মশার ওষুধ স্প্রে করার পরে ওই জায়গাগুলোতে ফলাফল কি হচ্ছে, তা নিয়ে ঠিকমতো কাজ করতে হবে। আমি বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞদের আহ্বান করছি, আমাদের গৃহীত কার্যক্রমের মূল্যায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আমরা সঠিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেব।
তিনি বলেন, এ শহর আমাদের সবার। সবাই মিলেই এ শহরের জন্য কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলা করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। মশা যখন কামড়াবে তখন কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কারা বিশেষজ্ঞ এসব কিছুই দেখবে না। মশা কিন্তু যখন কামড়াবে তখন সবাইকেই কামড়াবে। মশার উপদ্রব এ শহরের একটি সমস্যা। তাই আমরা সবাইকে ডেকেছি। মশকনিধনে আমরা কী করছি, এগুলো ঠিক আছে কিনা, আর কী কী করা যায় সেই সম্পর্কে আপনাদের জানাব। আমাদের প্রস্তুতিগুলো জানাব। সেই সঙ্গে আপনাদের কাছ থেকে পরামর্শগুলো শুনব। আর কী কী করা যায়, তার গাইডলাইন আপনারাও আমাদের জানাবেন। সব মিলিয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, নিপসমের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. গোলাম সারোয়ার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মোইনুল আহসান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, ডিএনসিসির মশক নিধন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান, কাউন্সিলর আব্দুল মতিন প্রমুখ।