হাজারীবাগে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে সমাবেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২৪ পিএম
চামড়ার ট্যানারির সঙ্গে হাজারীবাগের গজমহল ও শিকারিটোলা মৌজার জমি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধিগ্রহণের পরিকল্পনার খবরে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেকোনো মূল্যে অধিগ্রহণ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়রা ‘প্রাণ দিব তো, জমি দিব না’- এমন অঙ্গীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অর্ধ সহস্রাধিক স্থানীয় বাড়ির মালিক গজমহল ট্যানারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ অঙ্গীকার করে।
সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের যেখানে ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন, সেখানে রাজউক খোদ রাজধানীর বুকে কয়েক হাজার বাসিন্দাকে গৃহহীন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একটি কুচক্রীমহলের পরামর্শে রাজউক এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশের আগে স্থানীয় প্রতিটি মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়। সে ঘোষণা অনুযায়ী স্থানীয় বাসিন্দারা সমাবেশস্থলে যোগ দেয়। সমাবেশ শেষে গজমহল-শিকারি টোলাকে অধিগ্রহণের হাত থেকে রক্ষায় ১৩ সদস্যের বসতভিটা মালিক ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক হন রায়হান চৌধুরী ও সদস্য সচিব হন দিপু আহমেদ। আহ্বায়ক কমিটি পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
হাজী আরিফের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন জানে আলম। সভায় রায়হান চৌধুরী বলেন, জীবনের বিনিময়ে হলেও বাপ-দাদার বসতভিটা রক্ষা করব। একচুল মাটি নিয়ে যেতে দেব না।
স্থানীয় বাসিন্দা আইনজীবী মানিক হোসেন মিলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের ঘর দিয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। সেখানে খোদ রাজধানীর বুকে কয়েক হাজার মানুষকে গৃহহীন করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজউক। আমরা উদ্বাস্তু হতে চাই না। একটি কুচক্রী মহলের শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে হাজারীবাগের ওপর। এদের শনাক্ত করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল লাল মদক বলেন, আমার সন্তানদের গৃহহীন করতে চাই না। এখানে আমরা উপজাতি নই। অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে সব ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, এই এলাকা আরও একবার অধিগ্রহণ হয়েছিল। আইন অনুযায়ী এক এলাকা একাধিকবার অধিগ্রহণ হতে পারে না।
মতিউর রহমান মতি বলেন, আমাদের জায়গা নিয়ে রাজউক ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখছে। আমাদের গৃহহীন করে তারা এখানে ব্যবসা করতে চায়। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি বাড়ি থেকে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাজী আরিফ বলেন, প্রথমে ট্যানারির ৬০ একর জমি নিয়ে নতুন নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল রাজউকের। একটি চক্রের শ্যেনদৃষ্টি পড়ায় রাজউক এখন ট্যানারি এলাকার বাইরে গজমহল ও শিকারি টোলা মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও ৪০ একর জমি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই চক্রটি কারা, যারা প্রধানমন্ত্রীর নীতির বাইরে হাঁটছে। তাদের শনাক্ত করতে হবে।
অন্য বক্তারা বলেন, ‘নিজের রক্ত দিব, এরপরও বসতভিটা দিব না। এখানে এক কাঠা জমির তিনজন মালিকও রয়েছেন। যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে সেটি দিয়ে নতুন করে কেউ জমি বা বাড়ি কিনতে পারবে না। এ চক্রান্তের ফলে কয়েক হাজার বাড়ির মালিক গৃহহীন হয়ে পড়বে। খোদ শহরের বুকে জমি অধিগ্রহণ যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করা হবে।’
সমাবেশে আরও বলা হয়, রাজউকের ব্যবসার ইচ্ছা থাকলে সেটি গ্রামেগঞ্জে গিয়ে করুক। তারা ট্যানারির জায়গা নিতে পারে। কিন্তু আমাদের গৃহহীন করে ব্যবসা করবে, প্রাণ থাকতে সেটি করতে দেওয়া হবে না। সমাবেশ শেষে অধিগ্রহণ পরিকল্পনা প্রতিহতে কর্মসূচি নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।