তাপমাত্রা কমাতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে: চিফ হিট অফিসার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:০৪ এএম
অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার বাংলাদেশের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন বলেছেন, উচ্চ তাপমাত্রা কারণে মানুষের শরীরে কার্যক্ষমতা কমে যায়। এ বছরের তুলনায় পরবর্তী বছরের গ্রীষ্মকাল আরও বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং মতো এই জটিল প্রাকৃতিক সমস্যাকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগই পারে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) কনফারেন্স হলে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজের (বারসিক) যৌথ আয়োজনে ‘শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি: কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইমেরিটাস প্রফেসর অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ। বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। বৈঠকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বুশরা আফরিন বলেন, ‘আমরা প্ল্যান করছি সিটি নেটওয়ার্ক গড়ার, ক্লাইমেট মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করছি। যতটুকু সম্ভব অ্যাডাপটেশন করতে হবে এবং মিটিগেশনের উপায়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া নগরে বিভিন্ন জায়গা গাছ লাগাতে হবে। বাসা বাড়ির ছাদেও গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এতে উচ্চ তাপমাত্রার কামানোর নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে।
কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক অনেকগুলো কারণ থাকলেও স্থানীয় কারণগুলো মুখ্য। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্থানীয় কারণগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। ঢাকা শহরের এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শহরের প্রতিটি ফাঁকা স্থানে গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান বৃদ্ধি করতে হবে, রাস্তার বিভাজনে শোভাবর্ধনকারী গাছ ছাড়াও ভূমির ধরনের ভিত্তিতে উদ্ভিদ, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম উপকারী বৃক্ষ যেমন- ফলজ, বনজ, ওষুধি গাছ রোপণ করতে হবে, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গাছ নিধন নয় বরং গাছকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে, যেমনটি উন্নত দেশগুলোতে হয়ে থাকে। যে উন্নয়নটি বাধ্যতামূলক সেখানে পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে গাছ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করাসহ ১০টি সুপারিশ করেন তিনি।
খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন সময়োপযোগী গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনটিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে। এর জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। শহরের তাপমাত্রা কমাতে নীতিগতভাবে যেসব উদ্যোগ প্রয়োজন তার জন্য সংসদে কথা বলব।’
বাপার সহসভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় আমরা বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছি আমাদের আবার সেই প্রক্রিয়ায় পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে।
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে সব সৌন্দর্য বর্ধনকারী দালান নির্মাণ করা হচ্ছে তার অধিকাংশ দেয়ালই কাচের তৈরি যা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি উন্নয়ন কার্যক্রমের পূর্বে আমাদের জনস্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)-এর আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসানসহ বারসিকের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।