সিগারেট-জুতার সূত্র ধরে গৃহকর্ত্রী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন
উত্তরা পূর্ব থানা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:২৫ পিএম
রাজধানীর উত্তরখানে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে সাবলেট ভাড়াটিয়া হত্যা করে বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রী হাজেরা বেগমকে (৮০)। হত্যার পর ওই ভাড়াটিয়া মো. আরব আলী (৫৮) কুমিল্লার বুড়িচং থানা এলাকায় পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
এর আগে উত্তরখানের মাস্টারপাড়ার ওজাপাড়া ৮২/৩ নম্বর বাড়ির উত্তর পাশের রুমে গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে হত্যাকাণ্ডের খবর পায় পুলিশ। পরে রাত ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত বৃদ্ধার মেয়ে নাজমুন নাহার বীনা বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় মঙ্গলবার (৪ জুলাই) গভীর রাতে হত্যা মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বীনা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তার মায়ের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলিয়ে হত্যা করে রুমের দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় খুনিরা।
ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার সিগারেটের অংশবিশেষ, আসামির ব্যবহৃত জুতা ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিটিটিভি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হয়। এসব আলামতের বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল আসামি মো. আরব আলীকে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং এলাকা থেকে গতকাল (৫ জুলাই) গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আরব আলী। পরে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে মোর্শেদ আলম বলেন, নিহত হাজেরা বেগম বাড়ির উত্তরের রুমে একা বসবাস করতেন। দক্ষিণ পাশের চারটি রুমে ভাড়াটিয়ারা বসবাস করেন। কিছুদিন আগে ভাড়াটিয়া নাসিমা বেগম ও আরব আলীর সঙ্গে বাসা ভাড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার (৩ জুলাই) নিহত বৃদ্ধাকে তার মেয়ে একাধিকবার ফোন করে পাননি। পরের দিন মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে মামাতো ভাই রবিন মামলার বাদীকে ফোন করে জানান, হাজেরা বেগমের রুম ছিল বাইরের দিক থেকে তালাবদ্ধ। জানালা দিয়ে ফ্লোরে শোয়া অবস্থায় তাকে দেখা যায়। পরে বাদীর মামা আবুল হোসেন ও তার মামাতো ভাই রবিনসহ আশপাশের লোকজন এসে রুমের তালা ভেঙে ফ্লোর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে বাসার বিছানার ওপর মালামাল এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
৪ জুলাই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের মেয়ে নাজমুন নাহার বীনা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর উত্তরখান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুব আলমের নেতৃত্বে একটি টিম ৩০ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে একমাত্র আসামি মো. আরব আলীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তরিকুর রহমান, বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম, উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. বদরুল হাসান, দক্ষিণখান জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার রাকিবা ইয়াসমিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।