ছবি-যুগান্তর
জমজমাট রাজধানীর দুই সিটির স্থায়ী ও অস্থায়ী কুরবানির পশুর হাট। বৃষ্টির মধ্যেও মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশ জমে ওঠে বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরব প্রতিটি হাট। সহনীয় দামে পছন্দের পশু কিনতে পেরে স্বস্তি দেখা গেছে ক্রেতাদের। বিক্রি জমে ওঠায় বিক্রেতাদের মুখেও হাসি ফুটেছে। শুরুর দিকে বিক্রেতারা যেমন দাম হাঁকছিলেন, বিক্রি জমে ওঠার পর তারা সেই চড়া দাম থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছেন। তবে হাটভেদে পশুর দরদামের পার্থক্য রয়েছে। বুধবার হাটে পশু বিক্রি আরও বাড়বে-এমন অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
মোহাম্মদপুরের বছিলাহাটে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রি জমজমাট। কিছুক্ষণ পরপরই গরু কিনে হাট থেকে বের হচ্ছেন ক্রেতারা। একেকটি গরু ১ লাখ ২০ হাজার, ১ লাখ ৩৫ হাজার, এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৬২ হাজার টাকায় কিনে নিতে দেখা গেছে। পছন্দের পশু কিনে ট্রাকে বা দড়ি ধরে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।
মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেডের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বছিলাহাট থেকে একটি ষাঁড় কিনেছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাটে দেশি গরুর সমাগম হয়েছে। গত বছরের চেয়ে দাম বেশি হলেও পছন্দের গরু কিনতে পারায় আমরা খুশি।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় হাটগুলো কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কিছু গরুর উপরে থাকলেও অনেক গরুর উপরই ছাউনি নেই। গরুর গোবর আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার। এ অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতারা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এদিকে বাজেটের মধ্যে পশু পেয়ে ক্রেতারা খুশি হলেও বেপারি ও খামারিরা প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। গোখাদ্য ও গরুর পালনের খরচ বাড়ায় প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা। মঙ্গলবার দুপুরে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন হাটে পাবনার বেড়ার রফিকউল্লাহ একটি গরুর দাম হাঁকেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ১০-১৫ মিনিট দামদর করার পর ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় গরুটি কেনেন ধানমন্ডির বাসিন্দা রাশেদ হোসেন। এ বিষয়ে বিক্রেতা রফিকউল্লাহ বলেন, হাটে প্রচুর গরু। সময়ও কম তাই কোনোরকম খরচ উঠিয়ে গরুটি বিক্রি করে দিলাম।
গরুর দাম বুঝতে কমলাপুর হাট ঘুরে দেখেছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, দুদিন হাট ঘুরে মনে হলো গত দুদিনের চেয়ে মঙ্গলবার গরুর দাম কিছুটা কমেছে। ৮০-৯০ হাজার টাকায় ছোট গরু পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের মধ্যে মাঝারি ধরনের গরু মিলছে।
দেশের সর্ববৃহৎ পশুহাট গাবতলীতেও বিক্রি জমে উঠেছে। হাটভর্তি পশু, ক্রেতার উপস্থিতিও অনেক। গাবতলী হাটের বেপারিরা জানান, সোমবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অনেক গরু বিক্রি হয়েছে। আশা করি, বুধবার দুপুরের মধ্যে বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে যাবে।
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শন করে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ট হাট শুরু করেছিলাম। জনগণের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আমরা এ বছর ৮টি হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের ব্যবস্থা রেখেছি। এখানে এসে দেখলাম, একজন ক্রেতা যে গরুটি পছন্দ করেছেন সেই পরিমাণ টাকা তিনি সঙ্গে নিয়ে আসেননি। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে তিনি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে পছন্দের গরুটি কিনেছেন। আবার একজন বিক্রেতা গরু বিক্রির টাকা সঙ্গে বহন না করে হাটেই ডিজিটাল বুথে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে জমা করেন। ডিএনসিসির স্মার্ট হাটের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, হাটের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি। পশুর হাটের বর্জ্য পরিষ্কার করাসহ যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে ইজারাদারদের সেগুলো পালন করতে হবে। আমি গতবছরও শর্ত ভঙ্গ করায় জরিমানা করেছিলাম। এ বছরও কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি তাদের জমাকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে।