শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে আফতাবনগর হাটে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১২:৪২ এএম
আগামী ২৯ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। বাকি আর মাত্র ৯ দিন। এই উপলক্ষে রাজধানীর আফতাবনগর হাটে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এই হাটে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবে হাজার হাজার পশু।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীতে অস্থায়ী ১৭টি পশুর হাট বসবে। এ ছাড়া গাবতলি ও সারুলিয়ায় রয়েছে দুটি স্থায়ী পশুর হাট। এখন স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে বাঁশের খুঁটি, গেট বানানোসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে একটি আফতাবনগর হাট। হাটটি বসবে বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং এর ব্লক-কে থেকে এন পর্যন্ত এলাকাগুলোর খালি জায়গায়। এটি আয়তনের দিক থেকে রাজধানীর সর্ববৃহৎ কোরবানির গরুর হাট।
সরেজমিনে বাড্ডার আফতাবনগরের গরুর হাটে দেখা যায়, অনেক লোকবল একসাথে হাট সাজানোর কাজে ব্যস্ত। প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন নতুন অস্থায়ী শেড। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশাল ছাউনি। হাটের ভেতরের রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও অপ্রয়োজনীয় কাদামাটি অপসারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া একাধিক হাসিল ঘর তৈরি করা হচ্ছে। মাঠে কাদা ও উঁচু-নিচু জায়গা সমান করতে মাটি ফেলা হচ্ছে।
গতানুগতিক আঙ্গিকেই সাজানো হচ্ছে প্রধান ফটক। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র্যাবের জন্যও স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। তবে এখনও ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য বুথ বসানো হয়নি।
আফতাবনগরের হাট পরিচালনা কমিটির প্রধান সাইদুর রহমান তপন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে এবার প্রস্তুতিটা তুলনামূলক পরে শুরু হয়েছে। তারপরও আমাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কোরবানির হাটের কোনো বিষয়েই যাতে ঘাটতি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখছি আমরা। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের টাকা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে ভোগান্তি পোহাতে না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত হাসিল ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাটে তিন হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। আপনি চাইলে এবার গাড়িতে বসে অথবা গরুর সন্নিকটে গাড়ি পার্কিং করে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন।
হাটের ইজারাদার আব্দুল মান্নান জানান, এবার হাটের হাসিল লেখার জন্য পর্যাপ্ত লোক নিয়োগ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি, গোসলখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য রাস্তায় পর্যাপ্ত সেচ্ছাসেবী থাকবে আমাদের। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় পশুর হাট এবার বেশ জমজমাট হবে বলে আশা করছেন হাট সংশ্লিষ্টরা।
হাটের সাজসজ্জার কাজের মধ্যেই আগেভাগে গরু এনেছেন বেশ কয়েকজন খামারি। আগে হাটে আসা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রমজানের পর থেকে গরুর দাম বাড়তি। কোরবানির হাটেও সেই প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ গরুর দাম এবার বেশি হতে পারে। ব্যবসায়ীদের আশা, আগামী রোববার (২৫ জুন) থেকে পুরোদমে জমে উঠবে পশুর হাট। তখন ক্রেতাদের চাহিদা মতো পাবে কোরবানির পশু। এবার মাঝারি দামের পশু টার্গেট করে লাভের আশা করছেন তারা।
কথা হয় কুষ্টিয়ার পাটিকাবাড়ি থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী মনিরুল মালিথার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, গরুর সাইজ অনুযায়ী দাম। টুকটাক কেনা-বেচা হচ্ছে। আমি দশটা গরু নিয়া এসেছি। সোয়া লাখ থেকে দুই লাখের মধ্যে দাম। তিনি আরও জানান গত ঈদের বাজারে মাঝারির সাইজের গরুর বেশি চাহিদা ছিল। সেটা এবারও টার্গেট। এবার গরুর দাম পাবেন ব্যাপারিরা, যদি সীমান্তটা ভালোভাবে আটকানো যায়। কারণ ভারত থেকে গরু আসলে দাম কমে যাবে।
তার সঙ্গে আসা আরেক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সুজন বলেন, লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এবার গরুই তো কম। দেশি ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বরাবর বেশি।
হাট দেখতে আসা ক্রেতা আসাদুজ্জামান জানান এবার যদি হাটে পশুর সরবরাহ বেশি হয় তবে দাম কমবে, আর যদি কম হয় তাহলে বাড়বে দাম। তবে প্রতি বছরই সরকারি হিসাবে সাত শতাংশ বিক্রি বাড়ে। সেই হিসাবে এবারও পশু বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি। হাট কবে থেকে পুরোদমে জমে উঠবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেষের ২/৩ দিনে ঈদের বেচাকেনা জমবে পুরোদমে।