নবজাতক সন্তানের পর না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেছে বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তার মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাসপাতালটির সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এটিএম নজরুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। এ গাফিলতির প্রথমেই আছেন হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহা। তার কারণেই আজকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কী গাফিলতি ছিল-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের। কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি। তবে এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে এর প্রতিবেদন আসার কথা। ইতোমধ্যে ৫ দিন চলে গেছে, বাকি আছে ২ দিন। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
আঁখির স্বজনরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্ম দিতে নিজের ইচ্ছার কথা স্বামীকে জানিয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আঁখি। সেজন্য গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার চিকিৎসা নেন তিনি। প্রসব ব্যথা উঠলে ৯ জুন মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখিকে নিয়ে আসে পরিবার। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, প্রসূতিকে ভর্তির সময় চিকিৎসক সংযুক্তা হাসপাতালেই আছেন বলা হলেও আসলে তিনি ছিলেন না। সেই রাতে ওই চিকিৎসকের সহকারীরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। সে সময় জটিলতা তৈরি হলে অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটি ওই দিনই মারা যায়। সংকটাপন্ন অবস্থায় আঁখিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। এদিকে এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনলাইনে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ওই হাসপাতালে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল ওই হাসপাতালে। কোথায় অপারেশন হয়েছিল, তাদের আইসিইউ ছিল কিনা-সেটাও তারা দেখেছেন। অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ ‘মানসম্মত না হওয়ায়’ তাদের সব অপারেশন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে ইতোমধ্যে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছেন আঁখির স্বামী। সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী চিকিৎসক শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও মুনা সাহাকে গ্রেফতার করে ওই মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাপারটি আইনি কাঠামোর মধ্যে চলে গেছে, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে-হচ্ছেও তাই। যারা ওখানে ওই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা জেলহাজতে আছে।
আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যুর পর সেন্ট্রাল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে যত অভিযোগ উঠে, সেগুলোর বিষয়েও সাংবাদিকরা প্রশ্ন রাখেন হাসপাতালটির জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক চিকিৎসক এটিএম নজরুল ইসলামের কাছে।
এ হাসপাতালে একজন চিকিৎসক প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ রোগী দেখেন বলে তথ্য মিলেছে। একজন চিকিৎসক এত বেশি রোগী দেখলে ভালো চিকিৎসা আসলে সম্ভব কিনা-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে গেলে একজন চিকিৎসকের দৈনিক এত রোগী দেখা সম্ভব নয়।
কিন্তু সংযুক্তা সাহা দেখতেন, কী বলব আর এটি নিয়ে।’ সংযুক্তা সাহার বিষয়টি হাসপাতাল জানত কিনা এমন প্রশ্নে নজরুল বলেন, এ বিষয়ে তার ‘জানা নেই’। ডাক্তারের কাছে এলে চিকিৎসা তো মূলত তারাই দেন। তারপর কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই সেটা আমাদের কাছে আসে। বাইরের বিষয়গুলো আমাদের অবগত করা হয় না। এজন্যই আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পারিনি।