দুই বন্ধুর ক্ষোভের শিকার ইকরাম, হত্যার আগে মদ খাওয়ানো হয়
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ১০:২৯ পিএম
নিহত ইকরাম হোসেন মোল্লা। ফাইল ছবি
দুই বন্ধুর পৃথক ক্ষোভের শিকার হয়েছিলেন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র ইকরাম হোসেন মোল্লা (২২)। বন্ধু শান্তকে টাকা ধার দেওয়া এবং আরেক বন্ধু আবু বকর সিদ্দিকের অভিভাবকের কাছে নালিশ দেওয়া ইকরামের জীবনের কাল হয়েছিল। ধার পরিশোধ করতে হবে না এবং নালিশের কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকে শান্ত ও সিদ্দিক তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আদালতে দেওয়া শান্তর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে ইকরাম খুনের রহস্য বেরিয়ে এসেছে। শান্তকে কারাগারে এবং সিদ্দিককে দুদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
সূত্র জানায়, ইট বালুর ব্যবসায় লগ্নি করার কথা বলে ইকরামের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেয় শান্ত। বিনিময়ে প্রতি মাসে তাকে হাত খরচের টাকা দেওয়ার কথাও ছিল। ছয় মাস আগে নেওয়া দুই লাখ টাকা মাদকের পেছনে খরচ করে ফেলে শান্ত। একপর্যায়ে মূল টাকা ফেরত চাইলে শান্ত টালবাহানা শুরু করে। পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়ায় শান্ত ও সিদ্দিকের মা-বাবার কাছে ইকরাম অভিযোগ করেন। শান্তর মা-বাবা তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন সিদ্দিকের মা-বাবা। এ কারণে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন বাসায় যেতে না পেরে সিদ্দিক ক্ষুব্ধ হয় এবং ইকরামকে বড় ধরনের শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করে। বিষয়টি শান্তর সঙ্গে সে শেয়ার করে। ইকরামকে হত্যা করতে পারলে ধার পরিশোধ করতে হবে না এটা ভেবে দুনিয়া থেকে তাকে সরিয়ে দিতে সিদ্দিককে শান্ত পরামর্শ দেয়। এরপর দুজন মিলে পরিকল্পিতভাবে ইকরামকে হত্যা করে। শুক্রবার খিলক্ষেত থানার ডুমনি এলাকার একটি ডোবা থেকে ইকরামের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।
ইকরাম হত্যাকাণ্ডের ৩২ ঘণ্টার মধ্যে শান্ত ও সিদ্দিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। রোববার তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। সিদ্দিককে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। শান্তর জবানবন্দি থেকে জানা যায়-পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ মে রাত ১১টার দিকে মদ খাওয়ার জন্য ইকরামকে ফোন করে ডুমনি বালুচর এলাকায় ডেকে নেয় শান্ত। কিছুক্ষণ মদ আর মোটর ভাজা খাওয়ার পর ইকরাম বাসায় চলে যেতে চায়। মদের আসর থেকে উঠে পড়লে জোর করে তাকে বসানোর পর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে শান্ত। এতে ইকরাম মাটিতে পড়ে যায়। তখন সিদ্দিক কাটার দিয়ে তার গলা কাটে। এরপর দুজন মিলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। ইকরামের চোখ তুলে ফেলা হয়। খাতা সেলাইয়ের ভ্রমর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে পাশের বিলে শরীর উপুর করে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার জানান, ইকরামকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ঘটনার পরদিন খিলক্ষেত থানায় হারানোর জিডি করে পরিবার। পরদিন সকালে ডুমনি এলাকার বালুচরে লাশ পাওয়া গেলে পরিবার তা শনাক্ত করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইকরামের বৃহস্পতিবার রাতের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। কাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন তা নিশ্চিত হওয়ার পর দুজনকে আটক করা হয়। তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে খাতা সেলাইয়ের ভ্রমর, হত্যায় ব্যবহৃত কাটার ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়। ইকরামের বাবা কবির হোসেন মোল্লার করা মামলায় শান্ত ও সিদ্দিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
কবির হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঝুমা আক্তার ফোন রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ইকরামের ছবি বুকে নিয়ে বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। এলাকার সমবয়সী ছেলে শান্ত ইট-বালুর ব্যবসায় লগ্নি করার জন্য ইকরামকে প্রলুব্ধ করেছিল। বিনিময়ে হাত খরচা দেবে বলেছিল। এটা ভেবেই বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে ইকরাম শান্তকে দেয়। কিন্তু গত ছয় মাসে কোনো টাকা দেয়নি শান্ত। বরং ঘুরিয়েছে। আসল টাকাও দিচ্ছিল না। আরেক সহপাঠী সিদ্দিকের সঙ্গে শান্ত নেশা করতো। বিষয়টি জানার পর শান্তর মাকে ইকরাম জানায়।