রাজধানীর ১৫ জায়গায় সোমবার গ্যাসের চাপ ৩০ পিএসআই’র (প্রেসার পার স্কয়ার ইঞ্চি) বেশী ছিল। ফলে ওভার ফ্লো হয়ে দুর্বল, অবৈধ ও পাইপ লাইনের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বের হয়ে আসে। এই গ্যাসের গন্ধই ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার রাতে গন্ধ ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলো খুবই ঝুকিপুর্ণ ছিল। কোন কারণে আগুনের সংস্পর্শ পেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শংকা ছিল। তবে তিতাস গ্যাসের ঝটিকা অপারেশনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। মঙ্গলবারই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক,চুলা জ্বালানো যাবে।
সোমবার দিবাগত রাত ১১টা থেকেই মগবাজার, গ্রিন রোড, মহাখালী, আজিমপুর, ধানমন্ডি, মালিবাগ, বাড্ডাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাসের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে বাসা-বাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। গ্যাসের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন।
এ অবস্থায় রাতেই জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও তিতাস কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে চাপ বেড়ে যাওয়ায় (ওভার-ফ্লো) গন্ধ বাইরে আসছে। তিতাসের জরুরি ও টেকনিক্যাল টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাস লিকেজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন চুলায় আগুন জ্বালাতে কোনো সমস্যা নেই। মঙ্গলবার সকালে তিতাসের এমডি এ তথ্য জানান। এসময় তিনি আতঙ্কিত না হওয়ারও অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন গ্যাসের মধ্যে যে গন্ধ দেওয়া হয়, সেটা নিরাপত্তার জন্যই দেওয়া হয়। যাতে লিকেজ হলে গন্ধ বের হয়। আমরা সব ঠিক করেছি।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঢাকার ২১টি এলাকার পাইপ লাইন বিভিন্ন শিল্প কারখানার লাইনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এসব এলাকার পাইপে গ্যাসের চাপ থাকতো সাধারণত ৫ থেকে ৭ পিএসআই।
ঈদের ছুটির কারণে শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় ক্রমান্বয়ে গ্যাসের চাপ বেড়ে ৩০ পিএসআই‘র বেশি উঠে যায়। যার কারণে পাইপ লাইনের ছিদ্রপথে গ্যাস বের হয়ে পুরো এলাকায় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি হালকা ভাবে না দেখার পরামর্শ দিয়েছেন । তাদের বক্তব্য রাজধানীসহ সারাদেশে তিতাসের পাইপ লাইনে লাখ লাখ ছিদ্র আছে। গ্যাসের চাপ একটু বাড়লেই এসব ছিদ্র পথে গ্যাস বের হয়ে আসছে। এগুলো দ্রুত মেরামত বা পাইপলাইন পরিবর্তনের উপর জোর দেন তারা।
জানা গেছে বর্তমানে তিতাস গ্যাসের বেশিরভাগ পাইপলাইনের ‘টেকনিক্যাল লাইফ’ শেষ হয়ে গেছে। কমপক্ষে ২০ বছর আগে এসব পাইপলাইনের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপের বিভিন্ন স্থানের ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে গ্যাস বের হয়ে আশপাশের শূন্যস্থানে জমা হচ্ছে। আগুন, উচ্চতাপ বা অন্য কোনো গ্যাসের সংস্পর্শে এলেই ঘটছে বিস্ফোরণ। ১৯৭০ সাল থেকে এসব পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস বিতরণ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাটির ক্ষার ও লবণের কারণে পাইপগুলো ক্ষয় হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় জং ধরে পাইপ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তৈরি হয়েছে হাজার হাজার ছিদ্র। এসব ছিদ্রপথে প্রায়ই গ্যাস বের হচ্ছে। এছাড়া অবৈধভাবে ফুটো করে গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় বেশিরভাগ লাইনের অবস্থা জরাজীর্ণ। এর বাইরে প্রায় ৫০ হাজার সংযোগ রয়েছে যেগুলো সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা রয়েছে। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও গ্রাহক আঙ্গিনায় রাইজার রয়ে গেছে।
তিতাসের অসাধু কর্মীরা রাতের আঁধারে এসব বিচ্ছিন্ন সংযোগ ফের চালু করে দিচ্ছে। যেগুলো পুরো তিতাস গ্যাসের নেটওয়ার্ককে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এসব কারণে প্রায়ই তিতাসের পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটছে।
মঙ্গলবার সকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সোমবার রাতের ঘটনার বিষয়ে জ্বালানী বিভাগ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে ব্যাখ্যায় কি কারণে গন্ধ বের হয়েছে কিংবা গ্যাস লাইনে কোন ছিদ্র ছিল কিনা সে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
এতে বলা হয়, সোমবার রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ হতে ১১ টার মধ্যে ঢাকার রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, বেইলি রোডসহ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পরার অভিযোগ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তিতাস গ্যাসের ১৪টি ইমার্জেন্সি টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়। একইসঙ্গে যে সব ডিস্ট্রিক রেগুলেটিং স্টেশন (ডিআরএস) এর মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে, সে সব ডিআরএস থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়া হয়। ফলে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ফেসবুক পেজে রাত ১২টার দিকে জানান, ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার খবরে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ঢাকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।