পুরান ঢাকায় জৌলুশ হারিয়ে গেছে হালখাতা উৎসব বা চৈত্র সংক্রান্তি । এক সময় ঘটা করে পালন করা হতো এ উৎসব। কালের বিবর্তনে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে বাংলা নববর্ষের এ আমেজ।
আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। মুসলিম ব্যবসায়ীদের নিমন্ত্রণপত্রে মসজিদের মিনার, আর হিন্দু ব্যবসায়ীদের নিমন্ত্রণপত্রে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি সম্বলিত দাওয়াতপত্র এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে এখনও কিছু ব্যবসায়ী পুরাতন ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজার, চকবাজার ও মৌলভীবাজারের স্বল্প পরিসরে কিছু মোকামঘর ও গদিতে লালখাতায় শুরু হয় ব্যবসায়িক বছর। চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধোয়ামোছার কাজ করছে কর্মীরা । সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সরঞ্জাম। অনেকে আবার পয়লা বৈশাখের দিনের জন্য মিষ্টির অর্ডার দিয়েছেন। এদিন ক্রেতা-বিক্রেতার পুরনো সব পাওনা চুকিয়ে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন মিষ্টিমুখ করানো হবে। নতুন বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার আগামী এক বছরের ব্যবসায়িক সম্পর্কে যাত্রা শুরু হবে। অনেক ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজিয়েছেন লাইটিং করে।
পুরান ঢাকার একাধিক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, কালের বিবর্তনে হালখাতা বা চৈত্র সংক্রান্তির উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাব করার ফলে লাল কাপড়ে বাঁধাই করা হিসাব খাতার চল কমে গেছে। এখন অনেকটা নিয়ম রক্ষার জন্যই হালখাতার আয়োজন করা হচ্ছে। আগের মতো হালখাতায় এসে বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রবণতায় ভাটার টান পড়েছে।
তাঁতিবাজারের একাধিক জুয়েলারি দোকানে কথা বলে জানা গেছে, বৈশাখের প্রথম দিনে দোকান সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। পুরনো খাতার বদলে দোকানে উঠেছে নতুন খাতা। নতুন করে হিসাব সাজানো হবে নতুন বছরের। প্রথম দিনে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে ছোটখাটো উপহার সামগ্রীও। তবে রোজার দিনে এবার বৈশাখ হওয়ায় হালখাতা আর আগের মতো জমজমাট হবে না।
তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নূর হোসেন বলেন, প্রতিবছরই আমরা হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। পয়লা বৈশাখে দোকানে আগরবাতি জ্বালিয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নিয়মিত ক্রেতা ও আমন্ত্রিত অতিথিদের মিষ্টি ও নিমকি দিয়ে আপ্যায়ন করি। নতুনভাবে বছর শুরু করার চেষ্টা করি। তবে আগের মতো হালখাতায় এসে মহাজনদের বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রবণতাটা নেই। ফলে উৎসাহে কিছুটা ভাটার টান পড়েছে। আজ দোকানে আসা রোজাদার ক্রেতাদের খাবারের প্যাকেট দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। হালখাতার দিন দোকানের কাস্টমারদের মিষ্টিমুখ করানো হবে। গত কয়েক বছর ধরে হালখাতা আর জমজমাট হচ্ছে না। হালখাতা উপলক্ষে নিয়মিত ক্রেতাদের আমরা চাবির রিং, ঘড়ি, পার্স, ক্যালেন্ডার দিয়ে থাকি।
তাঁতিবাজারে টালিখাতা বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, কয়েক বছর থেকে হালখাতা অনুষ্ঠান অনেক কমেছে। আগের মতো টালি খাতা বিক্রি হয়না। এবার পহেলা বৈশাখ রমজানে পড়ায় বেঁচাবিক্রি আরও কমেছে। এখনও কিছু ব্যবসায়ী ঐতিহ্য হিসেবে পহেলা বৈশাখ বা চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে বলে জানান তিনি।
ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নেছার উদ্দিন মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, চৈত্র সংক্রান্তির আমেজ তেমন একটা নেই। তারপরেও কিছু ব্যবসায়ী এটি এখনও পালন করে থাকে। তবে বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যটি আবার ফিরে আসা উচিত বলে মনে করেন প্রবীণ এই ব্যবসায়ী।