দুই ভাইয়ের মৃত্যু: বিচার দাবিতে উত্তেজনা, গ্রেফতার ৬
ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
কুরআনে হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না রাজধানীর ডেমরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত আরিয়ান (৮) ও রায়হান (২) নামে দুই ভাইয়ের। সন্তান হারানোর বেদনায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা এ্যানি বেগম। বিচারের দাবি জানাচ্ছেন শোকে কাতর বাবা মারফত আলী।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভ্যানচালক মারফত মিয়া এলাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন বড় ছেলে আরিয়ানকে। প্রথম শ্রেণিতে পড়তো অরিয়ান। ছোট ছেলেকেও মাদ্র্রাসায় ভর্তির জন্য নিয়ত করেছেন মারফত ও তার স্ত্রী এ্যানি। তাদের মা কাজ করতেন এলাকার একটি ছাতার কারখানায়। মারফত মিয়ার আগের সংসারে ১৩ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত বুধবার দুপুরে ডেমরার বামৈল ব্যাংক কলোনী এলাকার মৃত ইসমাইল সরকারের বাড়িতে আম চুরি ঠেকাতে গাছে পেঁচিয়ে রাখা তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আরিয়ান ও রায়হানের। আপন দুই ভাইয়ের করুণ মৃত্যুর ওই ঘটনায় একই পরিবারের অভিযুক্ত ৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে ডেমরা থানায়। বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে মামলাটি করেন বাবা মারফত মিয়া (৪৫)।
এ ঘটনায় আটক গৃহকর্ত্রী, ৩ মেয়ে ও ১ মেয়ের স্বামীসহ ৫ জনকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ডেমরার বামৈল পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত ইসমাইল সরকারের ছেলে শহিদুল ইসলাম দিপু (৪৫), তার ভাই জাহিদুল ইসলাম টিপু (৩৮), গৃহকর্ত্রী জাহানারা বেগম (৫৬), বোন নিপা আক্তার (৪০), ডোরা বিনতে ইসমাইল (৩৩), সারা বিনতে ইসমাইল (৩০), নিাপা আক্তারের স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার পূর্ববাগ এলাকার মৃত কামাল উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে একেএম শাহ আলম (৪৮)। এ ঘটনায় ১নং আসামি দিপুকে গাজীপুর এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে ডেমরা থানায় হস্তান্তর করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ২নং আসামি জায়েদুল ইসলাম টিপু পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় অভিযুক্তদের উপযুক্ত বিচারের দাবিতে এলাকায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। বুধবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনার পরপরই উত্তেজিত জনতা ওই বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালেও বামৈল ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় আসামিদের সুষ্ঠু বিচারসহ ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন বিকালেই নিহত দুই শিশুকে দাফনের জন্য তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর থানার বাজিতপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে ডেমরায় বামৈল ঈদগাহ মাঠে বাদ জোহর ওই দুই শিশুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযুক্ত বাড়িওয়ালী জাহানারা বেগমসহ ওই পরিবারের সব সদস্য এলাকায় অহংকার করে চলেন। প্রতিবেশীদের কোনো তোয়াক্কা না করে সবাইকে অবহেলা করতেন। এলাকার কারও সঙ্গে মিশতেন না ওই পরিবারের লোকজন। তাদের ৪ তলা ভবনের নিচে কেউ দাঁড়ালে ওপর থেকে গরম পানি ছিটিয়ে দিতেন জাহানারা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া তারা প্রতি বছরের মতো এবারো আমের মৌসুমে মৌসুমি ফল চুরি প্রতিরোধে গাছের মধ্যে বিদ্যুৎ দিয়ে তার জড়িয়ে রেখেছিল।
মারফত মিয়া কান্নাভরা কন্ঠে অভিযোগ করেন, মনে হয় আমার ছেলের সঠিক বিচার পাব না। প্রথমে মামলা না করে মীমাংসার জন্য আমাকে ফ্ল্যাট বাসা দেওয়ার লোভ দেখানো হয়েছে। মামলা নেওয়া হয়েছে গভীর রাতে। আটকদেরও থানায় হাজতে না রেখে খোলাভাবে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার মৃত ছেলেদের রক্তের বিনিময় করব না কিছুতেই। এখন প্রশাসন ও আদালতের কাছে আমার একটাই দাবি আমার ছেলেদের মৃত্যুর দায়ীদের সঠিক বিচার যেন হয়।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুর রহমান বলেন, মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যথারীতি মামলা ও আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি একজনকেও দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে মা এ্যানি প্রতিদিনের মতো তার দুই শিশু ছেলেকে নিয়ে কারখানায় কাজে যান। এ সময় খেলার কথা বলে আরিয়ান ও রায়হান ওই বাড়িতে আম পাড়তে গেলে তারা বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই গাছের সঙ্গে একজন ও নিচে একজন ঝুলে থাকে। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুদের মৃত বলে জানান।