Logo
Logo
×

রাজধানী

সিদ্দিকবাজারে ভবনের ধ্বংসস্তূপে স্বজনদের আর্তনাদ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৩, ১০:০৩ পিএম

সিদ্দিকবাজারে ভবনের ধ্বংসস্তূপে স্বজনদের আর্তনাদ

কণ্ঠে স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। ছবি: যুগান্তর

পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনের সামনে নিখোঁজ আপনজনের খোঁজে দিনভর অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন স্বজনরা। তাদের চেহারায় ছিল উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা। কণ্ঠে স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি। মারা গেছেন নাকি আহত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপে কাতরাচ্ছেন- এমন দুশ্চিন্তার ঘোরে ছিলেন স্বজনরা। 

ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে অপেক্ষা করছিলেন ব্যবসায়ী মমিন উদ্দিন সুমনের শ্বশুর আব্দুর রউফ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সারারাত হাসপাতালে জামাইকে (মমিন উদ্দিন সুমন) অনেক খুঁজেছি। সন্ধান না পেয়ে এখানে এসে বসে আছি।

মমিন উদ্দিনের শ্বশুর আব্দুর রউফ যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার বিকালে জামাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা বলেছি। এরপর থেকে তাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি। ফোন ধরছে না। পরে জানতে পারি ভবনে বিস্ফোরণ হয়েছে।
 
তিনি জানান, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনের নিচে তার জামাইয়ের দোকান রয়েছে। দোকানের নাম আনিকা স্যানেটারি। বিস্ফোরণে দোকান বিধ্বস্ত হয়ে নিচে চাপা পড়ে আছে কিনা নিশ্চিত নই। 

আনিকা এজেন্সি ছাড়াও সিদ্দিকবাজারের গলিতে নিউ আনিকা স্যানিটারিসহ মোট চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়া এই স্যানিটারি পণ্যের ব্যবসায়ীর আরও দুটি শোরুম আছে এলিফ্যান্ট রোডে। 

তার ছয় প্রতিষ্ঠানে অর্ধশতাধিক লোক কাজ করেন। ছয়টি শোরুম চালাতে তিনি একটি ছোটখাটো কারখানাও গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে ৩০ থেকে ৩৫জন কর্মচারী আছেন। 

বংশালের মালিটোলায় নিজের বাসাসংলগ্ন একটা মোটরসাইকেলের শোরুমেরও মালিক তিনি। সেখানে কাজ করতেন আরও ১০-১৫ জন। সব মিলিয়ে মমিন উদ্দিন সুমনের ওপর নির্ভরশীল শতাধিক পরিবার।

বিধ্বস্ত ভবনের পাশের ফাতেমা মার্কেটের ব্যবসায়ী এ হাই স্যানিটারির মালিক আবদুল আজিজের বাল্যবন্ধু মমিন উদ্দিন সুমন । 

আজিজ বলেন, বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট আগেও সুমন আমার দোকানে বসা ছিল। তার দোকানে একজন বড় ক্রেতা আসায় সে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।

দুর্ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি লাশ বের করে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে স্বজনরা গিয়ে মমিন উদ্দিনের লাশ শনাক্ত করেন। 

খবর পেয়ে আব্দুর রউফ ঢাকা মেডিকেলের দিকে ছুটছিলেন। কোথায় যাচ্ছেন প্রশ্ন করতেই তিনি যুগান্তরকে বলেন, জামাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছি লাশটা দেখতে। 

আধা ঘণ্টা পর ৫টার দিকে মমিন উদ্দিনের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রবিন হোসেন শান্তর লাশ উদ্ধার করা হয়। শান্তর ভাই শাহাদাত হোসেন ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। 

রবিন হোসেন শান্তকে খুঁজতে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসেন তার শ্বশুর নুরুল ইসলাম। রাতভর ছোটাছুটি হাসপাতাল আর মর্গে, কোথাও রবিনের দেখা নেই। জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে লাশের অপেক্ষায় থেকে আর্তনাদ করছিলেন। 

নুরুল ইসলাম বলছিলেন, আল্লাহ তাকে কিভাবে রেখেছেন বলতে পারি না। আল্লাহ যদি তার ফেরেশতাদের মাধ্যমে জীবিত রাখেন, তাহলে তো বেঁচে আছেন। এ রকম তো অনেক ঘটনা আছে। সাত দিন পরেও তো জীবিত উদ্ধার হয়।

কয়েক মাস আগে শান্তর সঙ্গে নিজের আদরের মেয়েকে বিয়ে দেন নুরুল ইসলাম। ঈদের সময়ে উঠিয়ে নেওয়ার কথা। তিনি বলেন, খবর শোনার পরেই মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাকে বাড়িতে রেখে আমরা জামাইয়ের খোঁজে এসেছি।

নুরুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণের আগে জামাইয়ের সঙ্গে মেয়ের কথা হয়েছে। আজান দেওয়ার কারণে ফোন রেখে দিয়েছে। বলেছিল আসরের পর আবার ফোন দেবে। সেই ছিল তাদের শেষ কথা।

বিকাল ৫টার দিকে লাশ উদ্ধারের পর তিনি বলেন, যাক জামাইয়ের লাশটা তো পেলাম। এটাই বড় সান্ত্বনা। 

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে নিখোঁজ রয়েছেন মেহেদি হাসান স্বপন। তার ভাই তানভীর হাসান সোহাগ বুধবার সকালে ধ্বংসস্তূপের পাশে আর্তনাদ করে বলছিলেন, ভাই আমার ভাই রে বাঁচান ও ভবনের নিচে আছে ভাই। সেনাবাহিনীকে বলেন ভাই, একটু খুঁজতে। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর থেকেই স্বপনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে মোবাইল ফোনও। 

নিখোঁজ স্বপনের শ্বশুর আব্দুল মান্নান বলেন, স্বপন স্যানিটারি দোকানটির ম্যানেজার ছিল। স্বপন সঙ্গে আরও দুইজন ছিল, তাদের গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে কিন্তু স্বপনকে এখনও পাওয়া যায়নি। 

স্বপন প্রায় ২০ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করছেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে আছে।  তার স্বজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করতে না পারলে আমাদের বলুক, আমরা নিজেরা উদ্ধার কাজ শুরু করি। 

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী সিরাজকে খুঁজছেন তার স্বজনরা। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম