ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ডেমরায় ব্যবসায়ীর বাড়ি দখল!
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৩৪ এএম
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী সায়েরা খাতুন ও সন্তানরা। ছবি: যুগান্তর
রাজধানীর ডেমরায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক ডেভেলপার ব্যবসায়ীর সাড়ে ছয়তলা বাড়ি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করে নেয়া হয়েছে। এখন ওই বাড়িটি দখলের অপতৎপরতা চলছে। শুধু তাই নয়, অপহরণের পর অস্ত্র ও জাল টাকার মিথ্যা মামলায় ওই ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন সায়েরা খাতুন নামে এক গৃহবধূ।এ সময় গৃহবধূর বাবা আবদুল মালেক ও ৫ কন্যাসন্তান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গৃহবধূ সায়েরা খাতুন অভিযোগ করেন, ডেমরার মাতুয়াইলে ৪ কাঠা জমির ওপর তাদের একটি সাড়ে ৬ তলা বাড়ি আছে। ওই বাড়িটি দখলের জন্য সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু নেছার উদ্দিন তার স্বামীকে কতিপয় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় অপহরণ করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরদিন রাত ১০টার দিকে তাকে ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেয়া হয়। সেখানে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
সায়েরা খাতুন বলেন, আমি একজন অর্ধশিক্ষিত সাধারণ গৃহবধূ। আমার স্বামী আলমগীর হোসেন একজন ডেভেলপার ব্যবসায়ী। আমার পাঁচটি মেয়ে সন্তান। বড় মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী, মেজ মেয়ে মহিলা মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী, সেজ মেয়ে ১ম শ্রেণিতে পড়ে এবং অপর দুই মেয়ে ছোট। ঢাকা শহরে আমার স্বামী ছাড়া আপন আর কেউ নেই। আমার স্বামীর মাতুয়াইলে ৪ কাঠা জমির উপরে সাড়ে ৬ তলা একটি বাড়ি আছে। সেই বাড়িতে আমি স্বামী-সন্তানসহ ৩য় তলায় বসবাস করি। অপর ফ্লোরগুলো ভাড়া দেয়া আছে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে কুমিল্লা চান্দিনার বেলাশ্বর গ্রামের নেছার উদ্দিন খোকনের সঙ্গে আমার স্বামীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সে সুবাদে প্রায়ই কারণে-অকারণে আমার স্বামীর সঙ্গে তার অফিসে দেখা করতেন নেছার। গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় আমার স্বামী তার টিকাটুলিস্থ অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় খোকন আমাদের গাড়িচালক শহিদুল ইসলাম শহিদ ও জনৈক আবু তাহেরের যোগসাজশে কতিপয় সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় আমার স্বামীকে অপহরণ করে। তাকে মারধর করে জীবননাশের হুমকি দিয়ে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
সায়েরা খাতুন বলেন, আমার স্বামী যথাসময়ে বাসায় না এলে আমি আমার বাবার বাসায় গিয়ে বাবাকে নিয়ে শ্যামপুর থানায় জিডি করতে যাই। কিন্তু পুলিশ জিডি করতে গড়িমসি করে। ওইদিন সন্ধ্যায় কদমতলী থানায় গিয়ে স্বামীকে দেখতে পাই। তার সঙ্গে দেখা করে লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক কাহিনী জানতে পারি।
সায়েরা খাতুন অভিযোগ করেন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতায় নেছার উদ্দিন আমার স্বামীর বাড়িটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করে নেয়। বাড়ি দখলে নিতে আমার স্বামীকে গভীর রাতে ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। এরপর মিথ্যা ও বানোয়াট একটি মামলা দিয়ে জেলখানায় পাঠায়। এখন আমার স্বামী আলমগীর ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার সুমন কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। বর্তমানে নেছার উদ্দিন তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমার বসতবাড়ি থেকে আমার অসহায় পাঁচটি কন্যাসন্তানসহ উচ্ছেদের জন্য নানা পাঁয়তারা করছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রতিদিন সন্ত্রাসীদের নিয়ে বাড়ির আশপাশে মহড়া দিচ্ছে নেছার উদ্দিন। এলাকাবাসীকে বলে বেড়াচ্ছে যে সে বাড়িটি কিনেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বাড়ি দখল করে নেবে। এমন অবস্থায় আমি আমার সন্তানদের নিয়ে একজন অসহায় মেয়ে মানুষ হিসেবে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।