বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের দেশ বানাতে এক শিক্ষকের অভিনব উদ্যোগ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৯, ০৩:১১ পিএম
শাফিন আহমেদ
রমজানে যেসব রোজাদার ইফতারের সময় রাস্তায় জ্যামে আটকে পড়েন, আজান দেয়ার পরেও এক চুমুক পানি পান করে রোজা ভাঙার উপায় থাকে না তাদের, সেসব রোজাদারদের পানি পান করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন শাফিন আহমেদ নামের এই শিক্ষক।
তিনি ইউটিউবে ইংরেজি শিক্ষার ফ্রি ভিডিও লেসন তৈরি করেন। তার এসব ভিডিও দেখে অনেক শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে না গিয়েই ইংরেজি শিখে থাকেন।
শাফিন নামের তার সেই ইউটিউব চ্যানেলে বর্তমানে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৬০।
ওই চ্যানেলে গতকাল শুক্রবার শাফিন আহমেদ নামের ওই শিক্ষক লাইভ ভিডিওতে এসেছিলেন।
যেখানে তিনি নিজের দুঃখের কথা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তার ফলোয়ারদের জন্য আর কখনও এমন শিক্ষামূলক ভিডিও বানাবেন না। আর কখনও লাইভে আসবেন না। এই চ্যানেলটি তিনি বন্ধ করে দেবেন।
তার সেই কথাগুলো তুলে ধরা হলো -
‘আমি অনেক দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে লাইভে আসলাম। আমি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলাম।
আমি রোজাদারদের রাস্তায় পানি পান করাচ্ছিলাম। আমাদের দেশে অনেক বলে, সৌদি আরবে ইফতারের সময় অনেকে বাসার সামনে, অফিসের সামনে, দোকানের সামনে রাস্তার পাশে ছেলেমেয়েরা রোজাদারদের খেজুর খাওয়ায়, পানি, জুস দিয়ে ইফতার করায়।
আমার কাছে মনে হতো, এই কাজটা আমরা কেন করি না? প্রশ্নটি আমার মাথায় ঘুরপাক খেত সব সময়।
এই প্রশ্নের জবাব আমি পেয়েছি। আমি বুঝেছি এটা একজনকে শুরু করতে হবে।
আর শুরুটা আমিই করি না কেন? আমি এখন ইফতারের সময় রাস্তায় সবাইকে পানি পান করাচ্ছি।
এই ১০ দিনের এক দিনও আমি বাসায়, রেস্তোরাঁয় ইফতার করিনি। ঢাকার রাস্তায়, বাসস্টপে ঘুরে ঘুরে পানি পান করিয়েছি রোজাদারদের।
গতকাল মিরপুরে রোজাদারদের পানি পান করাতে এক ট্রাক পানি কিনেছি। সে ভিডিও আপনারা দেখেছেন।
গত ১০ টি রোজায় আমি দেখলাম বাসে কারো ভাই, কারো বাবা, কারো মা, কারো বোন রোজাদার কিন্তু ইফতারের সময় কাছে পানি, খেজুর পাচ্ছেন না।
রোজাদারদের পানি পান করানোর এই উদ্যোগ আমি নিয়েছি কারণ, ফেসবুক, ইউটিউবে আমার অনেক ফলোয়ার আছে। এ কাজটি করতে দেখলে তাদের অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন। তারা নিজেরাও আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন।
তবে আমি একেবারেই হতাশ। উত্তরায় কম করেও আমার এক লাখ ইউটিউব ফলোয়ার আছে, যারা আমার ভিডিওগুলো দেখেন। এখান থেকে লেসন নেন।
আমি ভেবেছিলাম উত্তরায় আরঙ এর সামনে গিয়ে দাঁড়াব। রোজাদারদের পানি পান করাব।
এজন্য আমি ফেসবুকে ৩ বার স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, এক লাখ ফলোয়ারের মধ্যে কেউ না কেউ আসবে, কেউ টাকা নিয়ে, কেউ গায়ে খেটে সঙ্গে থাকবেন।
কমপক্ষে ১০০জনকে আশা করেছিলাম আমি।
এতো লাখ লাখ ফলোয়ারদের থেকে মাত্র কয়েকজন আসল। অথচ আপনাদের অনেককেই আমি আশা করেছিলাম।
আমি যদি রাস্তায় রোজাদারদের প্রতিদিন পানি পান করাতে পারি তাহলে আপনার কেউ কি একটা রোজা স্যাক্রিফাইস করতে পারবেন না?
আমাকে ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চেনে। আমি আপনাদের জন্য ফ্রি ইংরেজি শিক্ষার লেসন বানাই। ইউটিউবে কোচিং করাই। আমি তো ব্যবসা করতে এই কাজটি কখনও করিনি। কারও থেকে টাকাও নেইনি। মন থেকে শুধু এই কাজটি করি।
আপনারা একদিনও আমার সঙ্গে এগিয়ে এলেন না।
আমি এটা আপনাদের থেকে আশা করিনি। আমি বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলাম। সৌদিতে পরিবার থেকে বলা হয়, যাও আজকে কোনো পথচারীকে ইফতার করাও, পানি, খেজুর খাওয়াও।
আমিও বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা কেউ এগিয়ে আসেননি। আমার ইউটিউব লেসন পড়ে অনেকে ইংরেজি শিখে জব পেয়েছেন। আমাকে সেটা জানিয়েছেন।
সে হিসাবে আমি আপনাদের একজন শিক্ষক। সেই শিক্ষককে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে এলেন না।
আর সেই দুঃখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কোনো ভিডিও লেসন বানাবো না আপনাদের জন্য।
আমার ইউটিউব চ্যানেল ক্লোজ করে দেব। তবে এক শর্তে সেটা চালু রাখতে পারি।
যদিও আমি শর্ত দেবার কেউ নই। শর্তটা হচ্ছে, আমি দেশের প্রতিটা জেলা থেকে ১০ জন চাই যারা মাত্র ১০টা পানি কিনবেন। ১০০ টাকা খরচ করবেন। আর সে টাকা না থাকলে আমি দিয়ে দেব।
ইউটিউবে যারা আমাকে স্যার ডাকেন, আমার যারা স্টুডেন্ট। তাদেরকে আমি অনুরোধ করছি, ইফতারের ১০ মিনিট আগে প্রতিটি জেলায় আমার ১০ জন ছাত্র রাস্তায় নেমে পড়বেন। ইফতারের ১০ মিনিট পর পর্যন্ত তারা রোজাদারদের পানি পান করাবেন।
এই ২০ মিনিট কে কে আমাকে দেবেন?
আজকে কে কে এই কাজটি করবেন তারা আমাকে ছবি, ভিডিও ক্লিপস পাঠাবেন।
আমি মনে করি, এই কাজটা আপনি করলে আপনাকে দেখে কালকে আপনার ছোট ভাই-বোনরা করবে।
আমি বাংলাদেশের প্রতিটা বাসস্টপে ইফতারের সময় রোজাদারদের পানি করানো দেখতে চাই।’
উল্লেখ্য, শাফিন আহমেদের এমন অনুরোধে তার ওই লাইভ ভিডিওর কমেন্ট বক্সে কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই ইফতারের সময় রোজাদারদের পানি পান করাতে আগ্রহী হয়েছেন।
এমনটি দেশের বাইরে ভারতের ত্রিপুরা, আসামসহ নেদারল্যান্ড থেকেও সাড়া মিলেছে।